বর্তমান সময়ে কুল চাষ অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কুল চাষে সঠিক জাত নির্বাচন জরুরি। জাত ভালো না হলে কাংখিত ফলাফল পাওয়া যায় না। বল সুন্দরী কুল বর্তমানে সফল একটি জাত। আজকে আমরা বল সুন্দরী কুল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো।
কুল বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য এবং ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-সি এর একটি অন্যতম উৎস। তাছাড়া খনিজ পদার্থ, শর্করা, খাদ্য শক্তি, ফসফরাস রয়েছে।
বল সুন্দরী কুল চাষ পদ্ধতি
বপনের সময় : বাংলাদেশে মধ্য মাঘ-মধ্য চৈত্র ও মধ্য শ্রাবণ মধ্য ভাদ্র পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
চাষপদ্ধতি : বাগান আকারে গাছ লাগাতে হলে গভিরভাবে চাষ দিয়ে জমি তৈরি করা উচিত বাড়ির আশে পাশে, পুকুর পাড়ে কিংবা রাস্তার ধারে গাছ লাগালে চাষ না দিয়ে সরাসরি গর্ত করে কুলের চারা লাগানো যায়। গর্তের আকার হবে সোয়া ২ হাত × সোয়া ২ হাত × সোয়া ২ হাত। গর্ত করার পর চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে গর্ত প্রতি ২৫ কেজি পচা গোবর, টিএসটি, পটাশ ও জিপসাম সার প্রতিটি ২৫০ গ্রাম করে গর্তের মাটির সাথে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রাখতে হবে।
চারার পরিমান : শতক প্রতি ৩০০-৬২৫টি।
- সার ব্যবস্থাপনা : ১-২ বছরের গাছে বর্ষার আগে আবার বর্ষার পরে জৈব সার ৫ কেজি, ইউরিয়া ১৫০ গ্রাম, টিএসপি ও এম ও পি ১২৫ গ্রাম হারে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।** ৩-৪ বছরের গাছে বর্ষার আগে আবার বর্ষার পরে জৈব সার ৭.৫ কেজি, ইউরিয়া ২৫০ গ্রাম, টিএসপি ও এম ও পি ২০০ গ্রাম হারে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।** ৫-৬ বছরের গাছে বর্ষার আগে আবার বর্ষার পরে জৈব সার ১০ কেজি, ইউরিয়া ৩৭৫ গ্রাম, টিএসপি ও এম ও পি ৩৫০ গ্রাম হারে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।** ৭-৮ বছরের গাছে বর্ষার আগে আবার বর্ষার পরে জৈব সার ১২.৫ কেজি, ইউরিয়া ৫০০ গ্রাম, টিএসপি ও এম ও পি ৪২৫ গ্রাম হারে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।** ৯ বা এর বেশি বছরের গাছে বর্ষার আগে আবার বর্ষার পরে জৈব সার ১৫ কেজি, ইউরিয়া ৬২৫ গ্রাম, টিএসপি ও এম ও পি ৫০০ গ্রাম হারে ভালভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন ।*****পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে শাবল দ্বারা গর্ত করে সার প্রয়োগ করুন। একটি পূর্ণবয়স্ক গাছের গোড়া থেকে সোয়া ২ হাত থেকে সোয়া ৩ হাত দূর থেকে শুরু করে ৭.৫ হাত পর্যন্ত জায়গা জুড়ে সার প্রয়োগ করুন।
পোকামাকড়ঃ
- বরই/কুলের মাকড় পোকা দমনে সালফার জাতীয় বালাইনাশক (যেমনঃ সালফেক্স ৮০ ডব্লিউপি, সালফটক্স ৮০ ডব্লিউপি, ম্যাক সালফার ৮০ ডব্লিউপি, রনভিট ৮০ ডব্লিউজি ১৫ গ্রাম প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করুন। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- বরই/কুলের বাদামি বিছা/শুঁয়া পোকা দমনে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ কট বা রিপকর্ড বা সিমবুস বা ফেনম বা এরিভো ১০ ইসি ১০ মিলিলিটার) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার পুরো গাছে স্প্রে করুন। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- বরই/কুলের কুশন স্কেল পোকা দমনে ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
- বরই/কুলের স্কেল/খোসা পোকা দমনে ফেনিট্রথিয়ন জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ সুমিথিয়ন বা ফলিথিয়ন ২০ মিলিলিটার) প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন।
- বরই/কুলের মিলিবাগ/ছাতরা পোকা দমনে ইমিডাক্লোরোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমনঃ এডমায়ার অথবা টিডো ৭-১০ মিলিলিটার/২ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে স্প্রে করতে হবে ১০ দিন পরপর ২/৩ বার। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
রোগবালাইঃ
- বরই/কুলের লাল মরিচা রোগ দমনে কপার অক্সিক্লোরাইড জাতীয় ছত্রানাশক (কুপ্রাভিট ২০ গ্রাম) ১০ লি. পানিতে মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করুন। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- বরই/কুলের এনথ্রাকনোজ রোগ দমনে প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ টিল্ট ৫ মিলি/১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- কুলের পাউডারি মিলডিউ রোগ দমনে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ কুমুলাস ডিএফ ৪০ গ্রাম ১০ লিটার বা থিওভিট ৪০ গ্রাম ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে) ৫-৭ দিন পর পর ২-৩ বার শেষ বিকেলের দিকে স্প্রে করুন। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
- কুলের সুটিমোল্ড রোগ প্রোপিকোনাজল জাতীয় ছত্রাকনাশক (যেমনঃ টিল্ট ৫ মিলি/১ মুখ) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৫ শতকে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। ঔষধ স্প্রে করায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
সতর্কতাঃ বালাইনাশক/কীটনাশক ব্যবহারের আগে বোতল বা প্যাকেটের গায়ের লেবেল ভালো করে পড়ুন এবং নির্দেশাবলি মেনে চলুন। ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা পোষাক পরিধান করুন। ব্যবহারের সময় ধূমপান এবং পানাহার করা যাবেনা। বালাইনাশক ছিটানো জমির পানি যাতে মুক্ত জলাশয়ে না মেশে তা লক্ষ্য রাখুন। বালাইনাশক প্রয়োগ করা জমির ফসল কমপক্ষে সাত থেকে ১৫ দিন পর বাজারজাত করুন।
আগাছাঃ আগাছা গাছের খাদ্যে ভাগ বসায় এতে করে আম গাছের ক্ষতি হয়। গাছের গোড়ায় যাতে করে আগাছা বা অন্য কোন উদ্ভিদ না জন্মাতে পারে সেজন্য গাছের গোড়ার মাটি মাঝে মাঝে কুপিয়ে আলগা করে আগাছা বাছাই করে ফেলতে হবে। বছরে অন্তত একবার লাঙ্গল দিয়ে ভালোভাবে চাষ করে দিলে আগাছা জন্মাবার সম্ভাবনা কমে যায়। কাচি ও নিড়ানীর সাহায্যে দমন করুন। জমিতে পানি আটকিয়ে রেখে এ আগাছা দমন করা যায়।
সেচঃ চারা রোপণের সময় মাটি শুকনো থাকলে মাঝে মাঝে হালকা সেচ দিন। বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে ৮-১০ বার পানির প্রয়োজন হয়। ফলন্ত গাছে শুষ্ক মৌসুমে (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল) পর্যন্ত ১০-১৫ দিন পর পর পানি সেচের ব্যবস্থা করুন; এতে ফল ঝরা হ্রাস পাবে। ফল বড় হবে ও ফলন বাড়বে। গাছে সার প্রয়োগের পর এবং খরার সময় বিশেষ করে ফলের গুটি আসার সময় সেচ দিন। গোড়ার আগাছা পরিষ্কার ও মাটি ঢেলা ভেঙ্গে দিন।
আবহাওয়া ও দুর্যোগঃ পানি যাতে জমি থেকে সরে যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। জমি বুঝে গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দেয়া যেতে পারে। চারা গাছ হেলে পড়ে গেলে সোজা করে দিতে হবে। প্রয়োজনে চারা গাছে খুঁটি বেঁধে দিতে হবে।
ফলনঃ জাতভেদে ৪০- ৬০ কেজি
সংগ্রহঃ মধ্য পৌষ থেকে মধ্য চৈত্র (জানুয়ারী থেকে মার্চ) মাসের মধ্যে ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিপক্ক অবস্থায় ফল সংগ্রহ করা খুবই জরুরী। অপরিপক্ক ফল আহরণ করা হলে তা কখনোই কাঙ্খিত মানসম্পন্ন হবে না। অতিরিক্ত পাকা ফল নরম ও মলিন রং এর হয়। এতে ফলের সংরক্ষণ গুন নষ্ট হয়ে যায় এবং তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। ফল যখন হালকা হলুদ বা সোনালী রং ধারণ করবে এবং গন্ধ ও স্বাদ কাঙ্খিত অবস্থায় পৌছবে তখন কুল সংগ্রহ করতে হবে। সংগ্রহকালে যাতে ফলের গায়ে ক্ষত না হয় এবং ফেটে না যায় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। সকাল বা বিকেলে ঠান্ডা আবহাওয়া ফল সংগ্রহ করুন। কুল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে কৃষি দিবানিশি দেখুন
We will be happy to hear your thoughts