পাতায় দাগ পড়া রোগ :
কোনো কোনো সময় পাতায় বাদামি রংয়ের দাগ পরিলক্ষিত হয়। এ রোগের আক্রমণ হলে ফলন এবং ফলের গুণগত মান হ্রাস পায়। সিকিউর নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ২-৩ বার ¯েপ্র করে সুফল পাওয়া যায়।
ফল পচা রোগ :
এ রোগের আক্রমণে ফলের গায়ে জলে ভেজা বাদামি বা কালো দাগের সৃষ্টি হয়। দাগ দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ফল খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে যায়। ফল পরিপক্ব হওয়ার পূর্বে নোইন ৫০ ডব্লিওপি অথবা ব্যাভিস্টিন ডিএফ নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৮-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
ক্রাউন রট :
এ রোগে আক্রান্ত গাছের কচি পাতা বিবর্ণ হয়ে ঢলে পড়ে য দ্রুত সমগ্র গাছে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে গাছ বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং মারা যায়। Phytophthora নামক ছত্রাকের আক্রমণে ক্রাউন রট রোগ হয়। আক্রান্ত ক্রাউন মাঝ বরাবর লম্বালম্বি ব্যবচ্ছেদ করলে কাণ্ডের মাঝ বরাবর বাদামি বা হালকা গোলাপি বর্ণ ধারণ করে। সাধারণত জলাবদ্ধতা সম্পন্ন জমিতে ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। জমি শুষ্ক রাখতে হবে। পলিথিন মাল্চ ব্যবহার করলে তা তুলে ফেলতে হবে। ডাইথেম এম ৪৫ অথবা রিডোমিল গোল্ড ৭৫ ডাব্লিও পি অথবা সিকিউর নামক ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ২-৩ বার গাছের গোড়া ও মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। তবে রিডোমিল গোল্ড ৭৫ ডব্লিওপি ও সিকিউর একত্রে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতি হেক্টর জমির জন্য ৫ কেজি ট্রাইকোডামা ভিরিডি ২৫ কেজি জৈবসারের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করে ক্রাউন রট, ভারটিসিলাম উইল্টসহ অন্যান্য মাটিবাহিত ছত্রাক দমন করা যায়।
ভারটিসিলাম উইল্ট :
এ রোগে আক্রান্ত গাছ হঠাৎ করে দুর্বল ও বিবর্ণ হয়ে পড়ে। আক্রমণ বেশি হলে গাছ বাদামি বর্ণ ধারণ করে এবং মারা যায়। আক্রান্ত ক্রাউন মাঝ বরাবর লম্বালম্বি ব্যবচ্ছেদ করলে কাণ্ডের মাঝ বরাবর বিবর্ণ-ফ্যাকাশে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। সাধারণত জলাবদ্ধতা সম্পন্ন জমিতে এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। জমি শুষ্ক রাখতে হবে। পলিথিন মাল্চ ব্যবহার করলে তা তুলে ফেলতে হবে। জমিতে চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে ৩০ গ্রাম-শতাংশ হারে স্ট্যাবল ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিলে রোগ জীবাণু নষ্ট হয়। কপার জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন বর্দ্দোমিক্সার (১ঃ১ঃ১০) ৮-১০ দিন পর পর ২-৩ বার গাছের গোড়া ও মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। প্রতি হেক্টর জমির জন্য ৫ কেজি ট্রাইকোডামা ভিরিডি ২৫ কেজি জৈবসারের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
স্ট্রবেরি শিকড় পচা রোগ:
লক্ষণঃ
এ রোগ হলে গাছের শিকড় পচে যায় ও হঠাৎ গাছ মারা যায় ।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ
- পানি নিস্কাশনের ভাল ব্যবস্থা রাখা।
- প্রতি লিটার পানিতে ইপ্রোডিয়ন বা কার্বেন্ডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক যেমন: রোভরাল ২ গ্রাম বা ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করে মাটিসহ ভিজিয়ে দেয়া।
- লাল মাটি বা অম্লীয় মাটির ক্ষেত্রে শতাংশ প্রতি চার কেজি হারে ডলোচুন প্রয়োগ করুন (প্রতি তিন বছরে একবার)।
- বীজ বপনের আগে বীজতলায় বা ক্ষেতে শুকনো কাঠের গুড়া ৩ ইঞ্চি পুরু করে বিছিয়ে পোড়ানো।
- মাটি সোলারাইজেশন করা- রোদের সময় মাটি পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা।
- একই জমিতে বার বার স্ট্রবেরি চাষ করবেন না।
- পূর্বে আক্রমণ হয়েছিল এমন জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করবেন না।
পাখি :
পাখি বিশেষ করে বুলবুলি, দোয়েল, শ্যামা প্রভৃতি পাখি স্ট্রবেরির সবচেয়ে বড় শত্রু। ফল আসার পর সম্পূর্ণ পরিপক্ব হওয়ার পূর্বেই পাখির উপদ্রব শুরু হয়। পাখি পাকা ও আধাপাকা ফল নষ্ট কওে এবং খাওযার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
আলোক প্রতিসরণশীল প্লাস্টিক বা সিল্ভার স্ট্রিপ ব্যবহারের মাধ্যমে বা বাগানে শব্দ তৈরি করে পাখি তাড়ানো যায়। ফল আসার পর সম্পূর্ণ বেড জাল দ্বারা ঢেকে দিতে হবে যাতে পাখি ফল খেতে না পারে।
ভাইরাস :
ভাইরাস রোগের আক্রমণে স্ট্রবেরির ফলন ক্ষমতা এবং গুণগতমান হ্রাস পেতে থাকে। সাদা মাছি পোকা এ ভাইরাস রোগ ছড়ায়। এডমায়ার ২০০ এসএল নামক কীটনাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ০.২৫ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ¯েপ্র করে সাদামাছি পোকা দমন করলে ভাইরাস রোগের বিস্তার রোধ করা যায়।
মাইট :
মাইটের আক্রমণে স্ট্রবেরির ফলন ক্ষমতা ও গুণগতমান মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়। এদের আক্রমণে পাতা তামাটে বর্ণ ধারণ করে ও পুরু হয়ে যায় এবং আস্তে আস্তে কুচকে যায়। গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ভারটিমেক ০১৮ ইসি নামক মাকড়নাশক প্রতি লিটার পানির সাথে ১ মিলিলিটার হারে মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর ২-৩ বার ¯েপ্র করতে হবে।
ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে রোপণকৃত বারি স্ট্রবেরি-১ এর ফল সংগ্রহ পৌষ মাসে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে। ফল পেকে লাল বর্ণ ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করতে হয়। স্ট্রবেরির সংরক্ষণ কাল খুবই কম বিধায় ফল সংগ্রহের পর পরই তা টিস্যু পেপার দিয়ে মুড়িয়ে প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা ডিমের ট্রেতে এমনভাবে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে ফল গাদাগাদি অবস্থায় না থাকে। ফল সংগ্রহের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাজারজাত করতে হবে। স্ট্রবেরির সংরক্ষণ গুণ ও পরিবহন সহিষ্ণুতা কম হওয়ায় বড় বড় শহরের কাছাকাছি এর চাষ করা উত্তম।
মাতৃ গাছ রক্ষণাবেক্ষণ
স্ট্রবেরি গাছ প্রখর সৌর-তাপ এবং ভারি বর্ষণ সহ্য করতে পারে না। এজন্য মার্চ-এপ্রিল মাসে হালকা ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা ফল আহরণের পর মাতৃগাছ তুলে টবে রোপণ করে ছায়ায় রাখতে হবে। ফল আহরণ শেষ হওয়ার পর সুস্থ-সবল গাছ তুলে পলিথিন ছাউনির নিচে রোপণ করলে মাতৃ গাছকে খরতাপ ও ভারি বর্ষণের ক্ষতি থেকে রক্ষা করা যাবে। মাতৃ গাছ থেকে উৎপাদিত রানার পরবর্তী সময়ে চারা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ফলন : হেক্টরপ্রতি ৩৫-৪০ হাজার চারা রোপণ করা যায়। প্রতি গাছে গড়ে ২৫০-৩০০ গ্রাম হিসাবে হেক্টর প্রতি ১০-১২ টন স্ট্রবেরি পাওয়া যায়। ফাটিগেশন পদ্ধতিতে প্রায় ১৫-২০ টন স্ট্রবেরি উৎপাদনসম্ভব