
মরিচ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল। এটি বাংলাদেশের নিত্য ব্যবহৃত মশলা। মরিচ কাঁচা ও পাকা দুই অবস্থায় খাওয়া হয়। বাংলাদেশের সব জায়গায়ই এর চাষ হয়। পরিমিত এবং নিয়মিত খেলে এটি ভিটামিন এ, বি, সি-এর যোগান দেয়।
উপযুক্ত জমি ও মাটিঃ
প্রচুর আলো-বাতাস এবং পানি, সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা আছে এমন দো-আঁশ মাটি মরিচ চাষের জন্য উপযোগী।
যে সব জায়গায় বেশি পরিমাণে চাষ হয়ঃ
মরিচ চাষে বৃহত্তর বরিশাল জেলা অনেক এগিয়ে। তাছাড়া বগুড়া, ফরিদপুর, নোয়াখালী,জামালপুর, মেহেরপুর, বরিশাল, কুমিলস্না, চট্রগ্রাম এবং ময়মনসিংহে প্রচুর পরিমাণে মরিচ চাষ হয়।
উল্লেখ্যযোগ্য জাত হলো
—রোপা ঝাল মরিচ, বোনা ঝাল মরিচ এবং মিষ্টি মরিচ। এই তিনটি জাতের মধ্যেও রয়েছে আরো অসংখ্য জাতের মরিচ। যেমন কামরাঙ্গা, বোম্বাই, কৃষ্ণকলি, ঘৃতকুমারী, সূর্যমুখী, সিটিন, বালিজুরী, জারলা, বারোমাসী, উবধা, পুষা জাওলা, বাইন, সাইটা, শিকারপুরী, ক্যালিফোর্নিয়া ওয়ান্ডার, ম্লিমপিম, ওয়ান্ডার বেল, ফুসিমি লংগ্রিন প্রভৃতি।
জাতের নাম | স্থানীয় নাম | অবমূক্তকারী প্রতিষ্ঠানঃ | জীবন কাল | উৎপাদন | রোপনের সময় |
বারি মরিচ-১ | বাংলা লংকা | ১৩৫-১৪০ | ১০-১১ কেজি | ||
বারি মরিচ-২ | ১১০-১২০ | ২০-২২ কেজি | |||
বারি মরিচ-৩ | ১১০-১২০ | ১৫-২০ কেজি | |||
হাইব্রিড মরিচঃ হট মাস্টার-F1 | ৫০ | কাঁচা মরিচ একর প্রতি ৬০০-৭০০মন। | |||
হটমাষ্টার প্লাস -F1 | মল্লিকা সীড কোম্পানী | ৫০ | কাঁচা মরিচ একর প্রতি ৬০০-৭০০মন। | ||
বারমাসী হাইব্রিড মরিচঃ সুপার হট-১৫-F1 | মল্লিকা সীড কোম্পানী | ৫০-৫৫ | কাঁচা মরিচ একর প্রতি ৬০০-৭০০মন. | ||
সনিক হাইব্রিড | সনিক | লালতীর | ৭০-৭৫ দিন | প্রতি হেক্টরঃ ৮-১০ টন কেজি | আগস্ট-অক্টোবর |
প্রিমিয়াম | লালতীর | শতক প্রতি ফলন ১০০ – ১২০ কেজি | সেপ্টেম্বর- ডিসেম্বর | ||
চন্দ্রমুখী | লাল তীর | ৬৭ | শতক প্রতি ফলন ৫০ – ৬০ কেজি | সারা বছর | |
হাইব্রিড মরিচ- সাকাতা ৬৫৩ (Sakata 653) | জুন-ডিসেম্বর | ||||
বোম্বাই মরিচ | বোম্বাই মরিচ | ০ কেজি |
হাইব্রিড মরিচ– সাকাতা ৬৫৩ (Sakata 653)
বপন সময়কালঃ জুন-ডিসেম্বর
- সাকাতা ৬৫৩ জাতের মরিচ গাছ থেকে ৫০ থেকে ৫৫ দিনে ফসল সংগ্রহ শুরু করা যায়
- মরিচ সোজা আকৃতির, ৭ থেকে ৯ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয় এবং এর রঙ আকর্ষণীয় সবুজ
- মরিচ খুব ঝাল এবং ফসলের জীবনকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফলের আকার আকৃতি একই থাকে
- এই জাতটি লবণাক্ততা সহিষ্ণু বিধায় উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য বিশেষ উপযোগী তবে সারা দেশেই এর চাষ হয়
সাকাতা ৬৫৩ জাতে একর প্রতি ফলন ১৫ থেকে ১৬ টন
হাইব্রিড মরিচ– বিজলী (Bijlee)
বপন সময়কালঃ সারা বছর তবে জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত উৎকৃষ্ট সময়
- বিজলী জাতটি ছোট অবস্থা থেকেই ফল দেয় এবং একসাথে অনেক ফল ধরে
- ৫০ থেকে ৫৫ দিনে ফসল সংগ্রহ করা যায়
- মরিচ সোজা আকৃতির এবং ৮ থেকে ১০ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়, এর রঙ আকর্ষণীয় সবুজ
- মরিচ খুব ঝাল এবং গাছের সবগুলো মরিচ একই আকৃতির হয়
- বিজলী জাতে একর প্রতি ফলন ১৫ থেকে ১৬ টন
হাইব্রিড মরিচ– বিজলী প্লাস (Bijlee Plus)
বপন সময়কালঃ জুন-ডিসেম্বর
- বিজলী প্লাস মরিচ তার বৈশিষ্ট্য ও ফলনের কারণে বর্তমানে কৃষকদের নিকট সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত হিসেবে বিবেচিত
- গাছ ছোট অবস্থা থেকেই ফল দেয় এবং এক সাথে অনেক ফল ধরে, ৪০-৪৫ দিনে ফসল সংগ্রহ করা যায়
- মরিচ সোজা আকৃতির, ৮ থেকে ১০ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয় এবং এর রঙ আকর্ষণীয় সবুজ
- বিজলী প্লাস মরিচ এর ত্বক পুরু ও মসৃণ, জীবনকাল শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফলের আকার আকৃতি একই থাকে
- গাছে থোকায় থোকায় মরিচ ধরে যার কারণে খুব সহজেই ফল তোলা যায়
- বাজারে প্রচলিত অন্য যে কোনও জাতের চেয়ে শতকরা ৩০ ভাগ ফলন বেশি হয়
হাইব্রিড মরিচ– বিজলী প্লাস ২০২০ (Bijlee Plus 2020)
বপন সময়কালঃ সারা বছর
- বিজলী প্লাস ২০২০ জাতটি উচ্চতাপমাত্রা ও বৃষ্টি সহনশীল তাই গ্রীষ্মকালে চাষের জন্য উৎকৃষ্ট
- এই জাতটিতে ভাইরাস ও ঝিমিয়ে পড়া রোগ (ব্যাক্টেরিয়াল উইল্ট) হয় না
- গাছ ছোট থাকতেই মরিচ ধরতে শুরু করে
- ৪৫ থেকে ৫০ দিনে ফসল সংগ্রহ করা যায়
- বিজলী প্লাস ২০২০ মরিচ সবুজ রঙের এবং ৮ থেকে ১০ সে.মি. পর্যন্ত লম্বা হয়
মাটি ও আবহাওয়া
মরিচ উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। সাধারণত ২০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড থেকে ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা মরিচ চাষের জন্য উপযোগী। সর্বনিম্ন ১০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং সর্বোচ্চ ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা মরিচের গাছের বৃদ্ধিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে মরিচ গাছের পাতা ঝরে যায় এবং গাছ পচে যায়। পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত বেলে-দো-আঁশ থেকে এঁটেল-দো-আঁশ মাটিতে মরিচ চাষ করা যায়। তবে জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ বা পলি দো-আঁশ মাটি চাষাবাদের জন্য উত্তম। মাটি অতিরিক্ত ভেজা থাকলে ফুল ও ফল ঝরে পরে। মাটির Ph ৬-৭ হলে মরিচের ফলন ভালো হয়।
জমি তৈরি
শীতকালীন মরিচের জন্য প্রথমে জমিকে চারিদিক দিয়ে আইলের অতিরিক্ত অংশ কেটে নিতে হবে । তারপর ৪-৬টি এবং ট্রাক্টর গভীর চাষ দিতে হবে। জমিতে শেষ চাষের আগে একবার মই দিয়ে সমান করে আগাছা বেছে ফেলে দিতে হবে। মাটির ঢেলা ভেঙে মাটি ঝুরঝুর ও সমতল করে নিতে হবে। জমি তৈরিতে শেষ চাষের আগে জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর বেড তৈরি করতে হবে। বেড চওড়ায় ১ মিটার হলে ভালো হয়। তবে দৈর্ঘ্য জমির আকার অনুসারে হলে ভালো হয়। বেডের উচ্চতা ১০-১৫ সেমি. হতে হয়। পাশাপাশি দুটো বেডের মাঝখানে ৫০ সেমি. প্রশস্ত এবং ১০ সেমি. গভীরতা বিশিষ্ট নালা পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার্থে রাখতে হয়।
মাটির অম্লতা দূর করা
Ph মান ৫.৮-৬.৫ এর চাইতে কম হলে মাটি বেশি অম্লিয় হয়ে যায় ফলে মরিচের ফলন কমে যাবে। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশ জমিতে ১-২ কেজি হারে চুন মিশিয়ে মাটির অম্লতা দূর করতে হবে।
উৎপাদন মৌসুম
বারি মরিচ-২ সারা বছর চাষ করা যায়। তবে রবি মৌসুমের জন্য ১-৩০ সেপ্টেম্বর ও খরিফ মৌসুমের জন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ মরিচ উৎপাদনের উপযুক্ত সময়।
বীজহার ও রোপণ পদ্ধতি
মরিচ সাধারণত দুই পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। যথাঃ ১. সরাসরি ক্ষেতে বীজ বপন ২. বীজ হতে চারা তৈরি করে। রবি ও খরিফ উভয় মৌসুমে বীজতলায় চারা তৈরি করলে ১-১.৫ কেজি/হে. বীজের প্রয়োজন হয়। আবার সরাসরি ছিটিয়ে মরিচ চাষাবাদ করলে হেক্টরপ্রতি ৬-৭ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। তবে এ পদ্ধতি শুধু মাত্র রবি মৌসুমে অবলম্বন করা উচিত।বীজ হতে চারা তৈরী করে রোপন করলে প্রতি হেক্টরে ৫০০-৬০০ গ্রাম বীজ এবং বিঘাপ্রতি ৫০০০টি চারার প্রয়োজন হয়।চারা রোপনের ক্ষেত্রে ৩০-৩৫ দিন বয়সের সুস্থ চারা, সারি থেকে সারির দুরত্ব ৫০-৫৫সে.মি. ও চারা থেকে চারার দুরত্ব ৪০-৪৫সে.মি. হলে অধিক ফলন পাওয়া যায়।
মরিচের বীজ শোধন
বীজতলায় বীজ বপনের আগে মরিচের বীজকে শোধন করে নিতে হবে এতে করে চারা অবস্থায় রোগ-বালাই কম হবে।প্রোভেক্স জাতীয় ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করা যায়। প্রতি লিটার পানিতে ২.৫ গ্রাম প্রভেক্স-২০০ দ্বারা বীজ শোধন করতে হবেবীজ বপনের পূর্বে মরিচ বীজ ওপরে উল্লেখিত ছত্রাকনাশক দ্বারা ৩০ (ত্রিশ) মিনিট ভিজিয়ে রেখে ছায়াযুক্ত স্থানে ১০-১৫ মিনিট শুকাতে হবে
বীজশোধনের কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও শোধিত বীজ ব্যবহারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
বীজ শোধনের ফলে বীজ বাহিত রোগ সংক্রমণ থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
চারা তৈরিঃ
জমি ভালভাবে চাষ ও ও মই দিয়ে ও আগাছা বাছাই করে ৩x১ মিটার আকারের বীজতলা করে সেখানে বীজ বপন করা হয়। শীতকালের জন্য ভাদ্র-আশ্বিণ মাসে ও বর্ষা মৌসুমের জন্য ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। চারা ১০ সে.মি. উঁচু হলে রোপণের উপযোগী হয়।
বীজ বপন
রোপণ পদ্ধতি: জমিতে বীজ বপনের আগে ১২ ঘণ্টা পনিতে ভিজিয়ে রেখে, পানি থেকে উঠিয়ে হালকা ছায়াতে ২ গ্রাম/কেজি হারে প্রভেক্স মিশিয়ে শুকিয়ে ঝরঝরা করে মূল জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। মনে রাখা দরকার বীজ কোনো ক্রমেই ১-১.৫ সেমি. মাটির গভীরে যেন না যায়। বপনের সময় জমিতে পর্যপ্ত পরিমাণ আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে বীজ বপনের ২-৩ দিন পর হালকা করে সেচ দিতে হবে এতে বীজ তাড়াতাড়ি গজাবে। সরাসরি ছিটিয়ে বপন করলে ১৫-২০সেমি. পরপর গাছ রেখে পাতলা করতে হবে।
সার ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
সারের নাম | সারের পরিমাণ (কেজি) | সারের পরিমাণ (কেজি) | সারের পরিমাণ (কেজি) | |
হেক্টর প্রতি | একর প্রতি | বিঘাপ্রতি | ||
গোবর/কম্পোস্ট | ৮-১০ টন | ৩-৪ টন | ১-২ টন | |
ইউরিয়া | ২২০ | ৯০ | ৩০ | |
টিএসপি | ৩০০ | ১২৫ | ৪০ | |
এমওপি | ২০০ | ৮৫ | ২৫ | |
জিপসাম | ১০০ | ৪৫ | ১৫ | |
জিংক বা দস্তা | ১ | ০.৪ | ০.১৪ | |
বোরন | ১.৫ | ০.৬ | ০.২ |
ইউরিয়া ও পটাশ সার তিন কিস্তিতে (লাগানোর ১০-১৫ দিন ৪০-৫৫ দিন ও ৭০-৭৫ দিন পর) এবং অন্যান্য সার জমি চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে।
চারা রোপণঃ
আগাছা পরিষ্কার করে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি প্রস্ততির পর চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০-৭০ সে.মি. ও চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সে.মি. রাখা হয়। চারা বিকেলে লাগাতে হবে এবং ২-৩ দিন সকাল বিকাল পানি দিতে হবে।
পাতলাকরণ
বুনা মরিচের ক্ষেত্রে মরিচ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর ২-৩ ধাপে পাতলা করতে হবে। প্রতি মিটার এ ১২-১৫টি গাছ রেখে পাতলা করতে হবে।
নিড়ানি
জমিতে আগাছার পরিমাণের ওপর নির্ভর করে নিড়ানি দিতে হবে। যদি আগাছা বেশি থাকে তাহলে নিড়ানি বেশি দিতে হবে। অর্থাৎ জমিতে কোনক্রমেই আগাছা রাখা যাবে না।
সেচ
মাটিতে অতিরিক্ত আর্দ্রতা মরিচ সহ্য করতে পারে না আবার বেশি সেচ প্রয়োগ করলে গাছ লম্বা হয় ও ফুল ঝড়ে যায়। জমির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে ৩/৪টি সেচ দিতে হবে। ফুল আসার সময় এবং ফল বড় হওয়ার সময় জমিতে পরিমাণমতো আর্দ্রতা রাখতে হবে।
মালচিং
সেচের পর মাটিতে চটা বাঁধলে নিড়ানি দিয়ে ভেঙে দিতে হবে তাতে শিকড় প্রয়োজনীয় বাতাস পায় এবং গাছের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
ফসল সংগ্রহ
মরিচের ফুল ফোটা, ফল ধরা ও রঙ ধারণ তাপমাত্রা, মাটির উর্বরতা এবং ভালো জাতের ওপর নির্ভর করে। উষ্ণ তাপমাত্রায় ফল তাড়াতাড়ি পাকে এবং ঠা-া তাপমাত্রায় ফল দেরিতে পাকে। মরিচ বীজ বপনের ৬০-৬৫ দিন পর ফুল আসা শুরু করে। ফুল ধরার ১৫-২০ দিন পর ফল ধরা শুরু করে। ফল আসার ২০-২৫ দিন পর ফল পাকতে শুরু করে। চারা লাগানোর ক্ষেত্রে, চারা লাগানোর ৩৫-৪০ দিন পর গাছে ফুল ধরতে শুরু করে, ৫৫-৬০ দিনের মধ্যে ফল ধরে এবং ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফল পাকতে আরম্ভ করে। কাঁচা অথবা পাকা অবস্থায় মরিচ তোলা হয়। মরিচ বীজের জন্য গাছের মাঝামাঝি অংশ থেকে মরিচ সংগ্রহ করতে হবে। প্রতি সপ্তাহে পাকা ফল সংগ্রহ করা যায়। শুকনো মরিচের জন্য আধাপাকা মরিচ তুললে মরিচের রঙ ও গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। তাই ফল লাল টকটকে হয়ে পাকলে সংগ্রহ করতে হবে। মরিচ সাধারণত রৌদ্রজ্জ্বল দিনে উত্তোলন করলে মরিচের গুণগতমান ভালো থাকে তাতে বাজার মূল্য বেশি পাওয়া যায়। ফল উঠানোর সময় বোঁটার ওপরের অংশ এবং ফলের ওপরের অংশ অর্থাৎ বোঁটার কাছের অংশ ধরে ফল তুলতে হবে।
সংগ্রহ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
জমি থেকে ফসল সংগ্রহের পর সংগৃহীত মরিচ হতে আঘাত প্রাপ্ত, রোগাক্রান্ত, বিকৃত, কাঁচা, অর্ধপাকা ও সম্পূর্ণ পাকা মরিচগুলোকে আলাদা করে ছায়াযুক্ত স্থানে ৮-১০ ঘণ্টা হালকা ছড়িয়ে রাখতে হবে। কোনো ক্রমেই মরিচের বোঁটা ছাড়ানো যাবে না তাতে মরিচ অল্প সময়ের মধ্যেই তার সজীবতা হারিয়ে ফেলে ও পচে যায়। সূর্যালোকের সাহায্যে ফল শুকানো দেশের একটি প্রচলিত পদ্ধতি। কিন্তু সতর্ক না হলে অতিরিক্ত সূর্য তাপে ফল সাদাটে রং এবং সংগ্রহকৃত ফলে বৃষ্টি বা শিশির পড়লে ফল পচা রোগ দেখা দেয়। এর পরে পাকা মরিচ পলিথিনে বা চাতালে বা পাকা মেঝেতে রৌদ্রজ্জ্বল পরিবেশে শুকাতে হবে। শুকানোর সময় মরিচ পাতলা করে বিছিয়ে দিতে হবে। মরিচের আর্দ্রতা ১০-১২% এ পৌঁছলে উক্ত মরিচ সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত হবে। শুকানো মরিচ ঝাকি দিলে ভেতরের বীজগুলো ঝনঝন শব্দ করলে বুঝতে হবে মরিচ ভালোভাবে শুকিয়েছে। সাধারণত সূর্যের আলোতে মরিচ শুকাতে ১০-১৫ দিন সময় লাগে।