
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ক্ষতিকর প্রভাবের ফলে পুরো পৃথিবীতেই একটি অস্তিরতা বিরাজ করছে। আমাদের দেশেও এর ব্যাতিক্রম নয়।অনাবৃষ্টি, অসময়ে অতি বৃষ্টি,খরা তীব্র দাবদাহ এবং অসহনীয় তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কৃষি সেক্টর,ডেইরি পোল্টি সব সেক্টরেই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ডেইরী সেক্টর ও হুমকির মুখে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধি কিভাবে ডেইরি সেক্টরে প্রভাব ফেলেঃ
তাপ দুদ্ধ উৎপাদনে অনেক প্রভাব ফেলে। তাপ-আর্দ্রতা সূচক(THI) দ্বারা দুদ্ধ উৎপাদনে তাপ ও আর্দ্রতার প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।তাপ- চাপ এবং আর্দ্রতা তাপীয় পরিবেশে প্রাণীর একটি অ-নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া,যখন একটি প্রানী এটি অপসারণের থেকে বেশি তাপ উৎপাদন করে।
আমােদর দেশে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়া বিরাজ করে সাধারনত শীতকাল ব্যতীত বাকি ৮-৯ মাস মেটামুটি তাপমাত্রা থাকে ২৮-৩৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা,এর সাথে আর্দ্রতা মিশে অনেক বেশি গরম৩৯-৪২ ডিগ্রী অনুভুত হয় গবাদি পশুর ক্ষেত্রে।
আমাদের দেশে সর্বাধিক প্রচলিত এবং জনপ্রিয় দুধ উৎপাদনকারী গরুর জাত হলো হলেস্টেইন,জার্সি এবং আয়ারশায়ার। এসব গরুর ক্ষেত্রে এরা বেশি গরম সহ্য করতে পারে না। কারন এই সব জাতের ত্বকের মাধ্যমে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে তাপ অপসারণ করার এই প্রজাতির ক্ষমতা তুলনামূলক কম,শরীরের ওজনের তুলনায় শরীরের কম ক্ষেত্রফল, অনুন্নত ঘাম গ্রন্থি,শরীরের উপর ঘন লোমের আবরন,রুমেনে ঘাস বা রাফেজের গাজন প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত তাপ উৎপাদন হয় যার ফলে গরুর শরীরের তাপ অনেক বেড়ে যায়। যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যঘাত ঘটে,শ্বাস প্রস্বাসের হারে তারতাম্য হয়,খাদ্য গ্রহন কমে যায় ও পানির চাহিদা বেড়ে যায়, এবং দুধ উৎপাদন ও প্রজনন ক্ষমতা মারাত্মক ভাবে কমে যায়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে RT (Relative Temparature) যখন ৩৭.৮ থেকে ৩৮.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস হয়েছে তখন THI মান ৪৫ থেকে ৭২ হয়েছে।THI ৭২ এর কম গাভীর জন্য থার্মোনিউট্রাল জোন হিসেবে পরিগনিত হয়৷ এই জোনে গাভী আরাম বোধ করে এবং দুদ্ধ উৎপাদন সহ বাকি সকল শারীরবৃত্তীয় কাজ ভালো ভাবে হয়।
তাই তপমাত্রা ৩৮.৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নিচে রাখতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে গরুর শরীরের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়।ফল শ্রুতিতে গরুটি খাদ্য গ্রহণ, দুধের উৎপাদন ও প্রজনন সূচক গুলো কমিয়ে দেয়।
খাদ্য গ্রহণের উপর তাপের প্রভাবঃ
রাফেজ হজম করার সময় প্রচুর পরিমান বিপাকীয় তাপ উৎপন্ন হয়, যা গরুর শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।একটি রিপোর্টে দেখা গেছে দুধ উৎপাদনকারী গাভীর ক্ষেত্রে পরিবেশের তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর উপর পৌছালে গাভী খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয় এবং পরিবেশের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর উপর উঠলে খাদ্যগ্রহণ তীব্রভাবে হ্রাস পায়।এই হ্রাসের ফলে দুধ উৎপাদন ও দুধের গুনগত মান নষ্ট হয়।
দুধ উৎপাদনের উপর প্রভাবঃ
তাপমাত্রা বাড়লে উল্লেখযোগ্য হারে গাভীর দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কমে যায়। তাপ বাড়লে এটি শুধুমাত্র দুধের উৎপাদনই হ্রাস করে না এটি দুধের উপাদান ও সোম্যাটিক কোষের সংখ্যাকেও প্রভাবিত করে থাকে।ভূমধ্যসাগরে গাভীর স্বাস্থ্যের উপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাব সম্পর্কিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে THI ৬৮ থেকে ৭৮ (বসন্ত থেকে গ্রীষ্ম পর্যন্ত) দুধের প্রোটিন ও চর্বি উপাদান যথাক্রমে ২.৯৬% এবং ৩.৫৮% থেকে ২.৮৮% ও ৩.২৪% কমেছে।উপরন্তু খাদ্যগ্রহন ও দুধের ফলন যথাক্রমে ৯.৬% এবং ২১% হ্রাস পেয়েছে।এই গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গাভীর কর্মদক্ষতা, খাদ্য গ্রহন,দুধ উৎপাদন ও স্বাস্থ্যের উপর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে।
ডেইরি বা ফ্যাটেনিং শেডে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে Drip Irrigation Bd Ltd. নিয়ে এসেছে ফগিং বা মিস্টিং ইরিগেশন টেকনোলজি। এটি ব্যবহারে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা থাকবে নিয়ন্ত্রনে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বহুগুন।
