ইট, কাঠ – পাথরের এই শহরে যেখানে মাটির দেখা পাওয়া দুস্কর সেখানে কৃষি কাজ এটা একটা সময় অকল্পনীয় হলেও ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র নগর কৃষি উদ্দোক্তাদের হাত ধরে তা ছোট ছাদ বাগান, ব্যলাকনি বাগান থেকে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী নগর কৃষি কর্মযজ্ঞ।
যেখানে বাহারি ফল,ফলাদি,মৌসুমি নামা রকম সবজি, শখের অলংকারিক বৃক্ষ এবং ফুল গাছ মিলিয়ে প্রতিটি অট্টালিকার ছাদ যেনো এক অপরুপ কৃষি বৈচিত্রে পরিপূর্ণ।
মুূ্দ্রার যেমন এপিঠ ওপিঠ থাকে তেমনি নগর কৃষিতেও আছে কিছু সমস্যা তার মধ্যে একটি নিয়ে এই লেখনীতে আলোকপাত করবোঃ সমস্যাটি নগর কৃষিতে সেচ সমস্যা নিয়ে।
ঢাকা সহ প্রতিটি শহর- নগরেই বিশুদ্ধ পানি নিয়ে একটি নীরব হাহাকার রয়েছেই এমতবস্থায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, জ্বলানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ এর মূল্য বৃদ্ধি, পানির স্তর নীচে চলে যাওয়া, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং দীর্ঘায়িত খরা সব মিলিয়ে অতিরিক্ত একটু পানি খরচ যেনো বিলসিতা, এ থেকেও বড় চিন্তার বিষয় পানির অপচয় রোধ করা।
নগর কৃষি তথাপি ছাদ বাগানে সীমিত মাটিতে টবে, ড্রামে ফল ও সবজি চাষ করা হয় বিধায় সল্প আয়তনের মাটি দ্রুত শুকিয়ে পড়ে, পানির লিচিং রেট ও অত্যাধিক বেশি হয় এবং সব থেকে বড় ফ্যাক্টর গুলো হলো সূ্র্য থেকে সরাসরি তাপ গ্রহণ,অতিরিক্ত বায়ু প্রবাহ ফলে পানি শুকিয়ে যায় খুবই দ্রুত। তাই নিয়মিত সেচ দিতে হয়। যা একজন নগর বাসীর ব্যাস্ত জীবনে সব সময় সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
সমাধান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে ২১ শতকের আধুনিক সেচ প্রযুক্তি/ SMART Irrigation Technology ড্রিপ ইরিগেশন প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি টি নিয়ে সরেজমিন ঢাকা শহরের বিভিন্ন ছাদ বাগান এ ড্রিপ ইরিগেশন এর বিভিন্ন ট্রায়াল প্রজেক্ট যেমনঃ সবজি চাষে,ফল,ফুল ইত্যাদি তে সম্ভ্যাব্যতা যাচাই করেছে Drip Irrigation Bd Ltd. নামের একটি প্রতিষ্ঠান এবং তারা আশাজাগানিয়া সাফল্য পেয়েছে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। প্রতিষ্ঠান টি বর্তমানে আগ্রহী ছাদ বাগানীদের বিভিন্ন সেচ প্রযুক্তি যেমনঃ ড্রিপ ইরিগেশন, স্প্রিংকলার ইরিগেশন ও ফগার ইরিগেশন সহ বিভিন্ন কৃষি পন্য (জিও ব্যাগ, মাল্চিং ফিল্ম,মাইক্রোগ্রিন কিট,হাইড্রোপনিক) সার্ভিস দিচ্ছে।
কেনো ড্রিপ ইরিগেশন নগর কৃষিতে সেচ সমস্যার সমাধানঃ
-ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম একটি বৈজ্ঞানিক সেচ প্রযুক্তি। ড্রিপার এর মাধ্যমে গাছের চাহিদা অনুযায়ী ফোঁটা ফোঁটা পানি সরবরাহ করা হয়। এই ফোঁটা ফোঁটা পানি গাছের ঠিক গোড়ায় পড়ে ও শিকড়ে প্রবেশ করে। তাই গাছ দ্রুত বৃদ্ধি হয়। সঠিক সময়ে ফল ও ফুল পরিপুষ্ট হয়।
– অটোমেটিক টাইমার ও কন্ট্রোলার ব্যবহার করে বাগানে আপনার অনুপস্থিতিতে প্রতিদিন নিয়মিত সকাল বিকাল পানি দেওয়া যায় ঠিক যতটুকু প্রয়োজন ততোটুকই। তাই আপনি যেখানেই থাকুন না কেনো সঠিক সময়ে আপনার গাছের টবে পানি সরবরাহ হবে।
– ফার্টিলাইজার ইনজেক্টর বা ভেঞ্চুরি ব্যবহার করে বাগানের প্রত্যেকটি গাছে সুষমভাবে তরল সার প্রয়োগ করা যায়। ফলে প্রত্যেকটি গাছ সঠিকভাবে সার পায় এবং সকল গাছ সমানভাবে বেড়ে ওঠে।
– ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করা অনেক সহজ। টাইমার বা ভেঞ্চুরি ছাড়াও বেসিক ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম ব্যবহার করা যায়৷ শুধু একটি ট্যাপ চালু বা বন্ধ করার মাধ্যমে ম্যানুয়ালি বাগানের সকল গাছে প্রয়োজন অনুসারে পানি দেয়া যায়।
– ছাদ বাগানের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা হলো অতিরিক্ত সূর্যোলোক ও তাপমাত্রা।তাপমাত্রা হ্রাসের জন্য অতিরিক্ত গরমের দিনে সকাল বিকাল পানি দেওয়ার প্রয়োজন হয় যা শুধুমাত্র সময়মতো ড্রিপ ইরিগেশন দিয়েই সম্ভব হয়।
– একবার সেটাপ করলে ৫ বছরের অধিক সময় ব্যবহার করা যায়।
– খরচ অত্যন্ত কম এবং পরিবেশ বান্ধব একটি প্রযুক্তি।
তাই সকল নগর কৃষি উদ্দোক্তা ভাই ও বোনদের প্রতি অনুরোধ থাকবে সকলেই সেচ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে,পানির অপচয় রোধ করতে ব্যবহার করুন ড্রিপ ইরিগেশন প্রযুক্তি।