ক্ষেত লাউ – লাউ

0

ক্ষেত লাউ – লাউ Khet Laow-Laow of Ispahani Agro Limited(IAL)লাউয়ের পরাগায়ন প্রধানত মৌমাছির দ্বারা সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য হেক্টর প্রতি দুটি মৌমাছির কলোনি স্থাপন করা প্রয়োজন। নানা কারণে লাউয়ের সব ফুলে প্রাকৃতিক পরাগায়ন ঘটে না এবং এতে ফলন কমে যায়।

25.00৳ 

Sold By:  Malini
0 out of 5
বিঃ দ্রঃপণ্যের দামের সাথে ডেলিভারি চার্জ যোগ হতে পারে। বিক্রেতার ফোন নম্বর (10AM-5PM) :
+8801307692797
Published on: January 5, 2022
Item will be shipped in 3-5 business days
SKU: 87e341955cb6 Category: Tags: ,

 

ক্ষেত লাউ – লাউক্ষেত লাউ – লাউ Khet Laow-Laow of Ispahani Agro Limited.  লাউয়ের পাতা সবুজ ও নরম। পুরুষ ও স্ত্রী ফুল যথাক্রমে রোপণের ৪২-৪৫ দিন এবং ৫৭-৬০ দিনের মধ্যে ফুটে। হালকা সবুজ রঙয়ের ফলের আকৃতি লম্বা (৪০-৪৫) এবং বেড় প্রায় ৩০-৩৫ সেমি.। প্রতি ফলের ওজন ১.৫-২ কেজি। প্রতি গাছে গড়ে ১০-১২টি ফল ধরে। চারা রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে প্রথম ফল তোলা যায়। লাউ প্রধানত শীত মৌসুমের। শীতকালে ফলন বেশি। এটি উচ্চতাপ ও অতিবৃষ্টি সহিষ্ণু ফলে সারা বছরও জন্মানো যায়। বাংলাদেশের সব এলাকায় সারা বছরই এর চাষ করা যায়। শীতকালীন চাষের জন্য ভাদ্রের প্রথমে আগাম ফসল হিসেবে চাষ করা যাবে।

রোপণ : ভাদ্র-আশ্বিন।

জীবনকাল : ১২০-১৪০ দিন

ফলন : শীতকালে ৪৫-৫০ টন/হেক্টর (৬-৭ টন/বিঘা) এবং গ্রীষ্মকালে ১৮-২২ টন/হেক্টর (২.৫.৩ টন/বিঘা)

লাউয়ের পুষ্টিমান
লাউয়ে ১৭ ধরনের এ্যামাইনো এসিড, ভিটামিন সি, রাইবোফ্লাভিন, জিঙ্ক, থায়ামিন, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ এবং ৯৬% পানি রয়েছে। এতে ফ্যাট ও কোলস্টেরল নেই বললেই চলে।

উৎপাদন প্রযুক্তি
মাটি ও জলবায়ু
মাটি
জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ এঁটেল দো-আঁশ মাটি লাউ চাষের জন্য উত্তম।

জলবায়ু
বেশি শীতও না আবার বেশি গরমও না এমন আবহাওয়া লাউ চাষের জন্য উত্তম। বাংলাদেশের শীতকালটা লাউ চাষের জন্য বেশি উপযোগী। তবে বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা শীতকালে কখনো কখনো ১০০ সে. এর নিচে নেমে যায়, যা লাউ চাষের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। দিন ও রাতে তাপমাত্রার পার্থক্য ৮-৯০ হলে ভালো। লাউয়ের ফলন উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়।

জীবনকাল
লাউয়ের জীবনকাল গড়ে ১৬৫-১৮৫ দিন।

বীজ বপনের সময় ও বীজের হার

আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বীজ বোনার উপযুক্ত সময়। তবে বীজ উৎপাদনের জন্য অক্টোবরের শেষ দিকে বীজ বোনা উত্তম। বিঘাপ্রতি ৭০০-৮০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

বীজ শোধন
বীজবাহিত রোগ প্রতিরোধ এবং সবল সতেজ চারা উৎপাদনের জন্য বীজ শোধন জরুরি। কেজিপ্রতি ২ ভিটাভেক্স/ক্যাপটান ব্যবহার করে বীজ শোধন করা যায়।

চারা উৎপাদন
বীজতলা তৈরি
লাউ চাষের জন্য নার্সারিতে পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করে নিতে হবে। এজন্য আলো বাতাস স্বাভাবিকভাবে পাওয়া যায় এমন জায়গায় ২০-২৫ সেমি উঁচু বেড করে নিতে হবে। বেড়ের ওপর ৪-৫.২ মিটার আকৃতির ঘর তৈরি করে নিতে হবে। ঘরের কিনারা বরাবর মাটি হতে ঘরের উচ্চতা হবে ০.৬ মিটার এবং মাটি হতে ঘরের মধ্যভাগের উচ্চতা হবে ১.৭ মিটার। এ ঘর তৈরির জন্য বাঁশ, বাঁশের কঞ্চি, ছাউনির জন্য প্লাস্টিক এবং এগুলো বাঁধার জন্য সুতলি বা দড়ি দরকার হবে

বীজ বপন
বীজ বপনের জন্য ৮x ১০ সেমি. বা তার থেকে কিছুটা বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়। প্রথমে অর্থেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে নিতে হবে। মাটিতে বীজ গজানোর জন্য জো নিশ্চিত করে (মাটি জো না থাকলে পানি দিয়ে জো করে নিতে হবে) তা পলিব্যাগে ভরতে হবে। অতপর প্রতি ব্যাগে দুটি করে বীজ বুনতে হবে। বীজের আকারের দ্বিগুণ মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে।

বীজতলায় চারা পরিচর্যা
নার্সারিতে চারার প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। বেশি শীতে বীজ গজানোর সমস্যা হয়। এজন্য শীতকালে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রাতে প্লাস্টিক দিয়ে পলিব্যাগ ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনে খোলা রাখতে হবে। চারায় প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে চারার গায়ে পানি না পড়ে। পলিব্যাগ এর মাটি চটা বাঁধলে তা ভেঙে দিতে হবে।

বীজের সহজ অংকুরোদগম
লাউয়ের বীজের খোসা কিছুটা শক্ত। তাই সহজ অংকুরোদগমের জন্য শুধু পরিষ্কার পানিতে ১৫-২০ ঘণ্টা অথবা শতকরা ১% পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে এক রাত ভিজিয়ে অতপর পলিব্যাগে বুনতে হবে।

জমি তৈরি
জমি নির্বাচন ও জমি তৈরি
এসব ফসল চাষে সেচ ও নিকাশের উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। একই জমিতে বার বার একই ফসলের চাষ পরিহার করতে পারলে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কমানো যাবে। ব্যাপক শিকড় বৃদ্ধির জন্য জমি এবং গর্ত উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে।

বেড তৈরি ও বেড থেকে বেডের দূরত্ব
বেডের উচ্চতা হবে ১৫-২০ সেমি.। বেডের প্রস্থ হবে ২.৫ মিটার এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। এরূপ পাশাপাশি ২টি বেড়ের মাঝখানে ৬০ সেমি. ব্যাসের সেচ নালা থাকবে এবং প্রতি ২ বেড অন্তর ৩০ সেমি প্রশস্ত শুধু নিকাশ নালা থাকবে।

মাদা তৈরি এবং বেডে মাদা হতে মাদার দূরত্ব
মাদার আকার হবে ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি. গভীরতা ৫০-৫৫ সেমি. এবং তলদেশ ৪৫-৫০ সেমি.। বেডের যে দিকে ৬০ সেমি. প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে সেদিকে বেডের কিনারা হতে ৬০ সেমি. বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে। একটি বেরের যে কিনারা হতে ৬০ সেমি. বাদ দেয়া হবে, তার পার্শ্ববর্তী বেডের ঠিক একই কিনার থেকে ৬০ সেমি. বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে অনুরূপ নিয়মে মাদা করতে হবে

সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি
এসব ফসল দীর্ঘদিন বেঁচে থাকে এবং অনেক লম্বা সময়ব্যাপী ফল দিয়ে থাকে। কাজেই এসব ফসলের সফল চাষ করতে হলে গাছের জন্য পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ নিশ্চির করতে হবে। এরা পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহের জন্য এর শিকড় অঞ্চল অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত করে। বাংলাদেশের সব অঞ্চলের মাটি পরীক্ষাসাপেক্ষে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হয়নি। কাজেই যেসব অঞ্চল এর জন্য সারের মাত্রা নির্দিষ্ট নেই সেসব অঞ্চল এর জন্য পরীক্ষামূলক প্রমাণের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত হারে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হলো।

লাউ ফসলের সারের মাত্রা ও প্রয়োগ পদ্ধতি
জমি তৈরির সময় সারের যে মাত্রা সুপারিশ করা হয়েছে, তার মধ্যে গোবর চাষের পর এবং টিএসপি, এমপি, জিপসাম ও বোরক্স সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। মাদায় চারা রোপণের যে সারের মাত্রা সুপারিশ করা হয়েছে তা দেওয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। তারপর ‘জো’ এলে ৭-১০ দিন পর চারা লাগাতে হবে।

চারার বয়স : বীজ গজানোর পর ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম।

চারা রোপণ
চারাগুলো রোপণের আগের দিন বিকালে পানি দিয়ে ভালোবাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। পরের দিন বিকালে চারা রোপণ করতে হবে। চারাগুলো নার্সারি থেকে ট্রলি বা টুকরি করে মাঠে নিয়ে যেতে হবে। মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলটপালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে। অতপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর ব্লেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে। চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে। পলিব্যাগ সরানোর সময় এবং চারা রোপণের সময় সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাছের বৃদ্ধি দেরিতে শুরু হবে।

পরবর্তী পরিচর্যা
সেচ দেয়া
লাউ ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। প্রয়োজনীয় পানির অভার হলে ফল ধারণ ব্যাহত হবে এবং ফল আস্তে আস্তে ঝরে যাবে। কাজেই সেচনালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। লাউয়ের জমিতে কখনো সব জমি ভিজিয়ে প্লাবন সেচ দেয়া যাবে না। শুধুমাত্র সেচ নালায় পানি দিয়ে আটকে রাখলে গাছ পানি টেনে নেবে। শুষ্ক মৌসুমে লাউ ফসলে ৪/৫ দিন অন্তর সেজ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।

বাউনি দেয়া
লাউয়ের কাক্সিক্ষত ফলন পেতে হলে অবশ্যই মাচায় চাষ করতে হবে। লাউ মাটিতে চাষ করলে ফলের একদিক বিবর্ণ হয়ে বাজারমূল্য কমে যায়, ফলে পচন ধরে এবং প্রাকৃতিক পরাগায়ন কমে যায়। ফলে ফলনও কমে যায়।

মালচিং
সেচের পর জমিতে চটা বাঁধে। চটা বাঁধলে গাছের শিকড় অঞ্চলে বাতাস চলাচল ব্যাহত হয়। কাজেই প্রত্যেক সেচের জর হালকা মালচ, করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে।

আগাছা দমন
কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির ঘাস লাউতে বোটল গোর্ড মোজাইক ভাইরাস নামে যে রোগ হয় তার হোস্ট। কাজেই চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সব সময়ই আগাছামুক্ত রাখতে হবে। এ ছাড়াও গাছের গোড়ায় আগাছা থাকলে তা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়।
সার উপরিপ্রেয়োগ
চারা রোপণের পর গাছপ্রতি সার উপরিপ্রয়োগের যে মাত্রা সারণিতে উল্লেখ করা আছে তা প্রয়োগ করতে হবে।

সারের নাম  মোট পরিমাণ(হেক্টরপ্রতি) প্রতি গর্তে  জমি তৈরির সময়
পচা গোবর      ১০০০ কেজি                   ১০ কেজি   সমুদয় গোবর, টিএসপি, এমওপি, বোরন
ইউরিয়া           ৫০০ কেজি                   ৫০০ গ্রাম   এবং ১/৫ অংশ ইউরিয়া পিট বা গর্ত
টিএসপি           ৪০০ কেজি                   ৪০০ গ্রাম    তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে। বাাকি এমওপি
এমওপি           ৩০০ কেজি                  ৩০০ গ্রাম   ও ইউরিয়া ৪ কিস্তিতে বছরে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
বোরন              ২ কেজি                     ০২ গ্রাম

বিশেষ পরিচর্যা
শোষক শাখা অপসারণ
গাছের গোড়ার দিকে ছোট ছোট ডালপালা হয়। সেগুলোকে শোষক শাখা বলা হয়। এগুলো গাছের ফলনে এবং যথাযথ শারীরিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটায়। কাজেই গাছের গোড়ার দিকে ৪০-৪৫ সেমি. পর্যন্ত ডালপালাগুলো ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে।

ফল ধারণ বৃদ্ধিতে কৃত্রিম পরাগায়ন
লাউয়ের পরাগায়ন প্রধানত মৌমাছির দ্বারা সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য হেক্টর প্রতি দুটি মৌমাছির কলোনি স্থাপন করা প্রয়োজন। নানা কারণে লাউয়ের সব ফুলে প্রাকৃতিক পরাগায়ন ঘটে না এবং এতে ফলন কমে যায়। হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করে লাউয়ের ফলন শতকরা ৩০-৩৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা সম্ভর। লাউয়ের ফুল ঠিকমতো রোদ পেলে দুপুরের পর থেকে ফোটা শুরু হয়ে রাত ৭-৮টা পর্যন্ত ফোটে। কৃত্রিম পরাগায়ন ফুল ফোটার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং পরদিন সকাল পর্যন্ত করা যায়। তবে পরদিন সকালে পরাগায়ন করলে ফল কম ধরে কিন্তু ফুল ফোটার দিন সন্ধ্যাপর্যন্ত যে কয়টা ফুলে পরাগায়ন করা হয় তার সবটিতেই ফল ধরবে। কৃত্রিম পরাগায়নের নিয়ম হলো ফুল ফোটার পর পুরুষ ফুল ছিঁড়ে ফুলের পাপড়ি অপসারণ করা হয় এবং ফুলের পরাগধানী (যার মধ্যে পরাগরেণু থাকে) আস্তে করে স্ত্রী ফুলের গর্ভমুণ্ডে (যেটি গর্ভাশয়ের পেছনে পাপড়ির মাজখানে থাকে) ঘষে দেয়া হয়। একটি পুরুষ ফুল দিয়ে ২-৪টি স্ত্রী ফুলে পরাগায়ন করা যায়।

ফসল তোলা (পরিপক্বতা শনাক্তকরণ)
ফলের ভক্ষণযোগ্য পরিপক্বতা নিম্নোক্তভাবে শনাক্ত করা যায়।
১. ফলের গায়ে প্রচুর শুং এর উপস্থিতি থাকবে।
২. ফলের গায়ে নোখ দিয়ে চাপ দিলে খুব সহয়েই নোখ ডেবে যাবে।
৩. পরাগায়নের ১২-১৫ দিন পর ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়।

লাউয়ের ফলের লম্বা বোঁটা রেখে ধারালো ছুরি দ্বারা ফল কাটতে হবে। ফল কাটার সময় যাতে গাছের কোনো ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। লাউ যত বেশি সংগ্রহ করা যাবে ফলন তত বেশি হবে।

ফলন : বারি লাউ-১ এবং বারি লাউ-২ যথাযথভাবে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৩৫-৪০ টন এবং বিঘাপ্রতি প্রায় ৪.৫-৫.০টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

বীজ উৎপাদন
বীজের জন্য ফল সংগ্রহ
বীজের জন্য অবশ্যই ভালোভাবে পরিপক্ব ফল সংগ্রহ করতে হবে। দুটি উপায়ে ফলের পরিপক্বতা বুঝা যাবে। যেমন-
১. ফল নাড়ালে ভেতরে বীজের শব্দ পাওয়া যাবে,
২. ফলের খোসা শুকিয়ে যাবে এবং শক্ত হয়ে যাবে কিন্তু ফলের ভেতর শুকাবে না। এই অবস্থায় বীজের সংগ্রহোত্তর পরিপক্বতার জন্য ফল ২-৩ সপ্তাহ রেখে দিতে হবে। বীজ উৎপাদনের জন্য জমির সবগুলো গাছের মধ্যে গাছের সতেজতা, ফলন ক্ষমতা এবং সুস্থতা দেখে কয়েকটি নির্দিষ্ট গাছ নির্বাচন করে তাতে নিয়ন্ত্রিত পরাগায়ন করতে হবে। অর্থাৎ নির্বাচিত গাছগুলোর মধ্যে একই গাছের পুরুষ ফুল দিয়ে একই গাছের স্ত্রী ফুল অথবা একই জাতের এক গাছে পুরুষ ফুল দিয়ে অন্য গাছের স্ত্রী ফুল পরাগায়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটার আগেই বাটার পেপার ব্যাগ দ্বারা বেঁধে রাখতে হবে যাতে অন্য জাতের পুরুষ ফুলের রেণু দ্বারা পরাগায়িত হতে না পারে এবং ফুল ফোটলে স্ত্রী ফুল পরাগায়িত করে আবার ব্যাগ দ্বারা স্ত্রী ফুল বেঁধে দিতে হবে। এই ব্যাগ দ্বারা ফল ৩-৪ দিন বেঁধে রাখতে হবে।

বীজের ফলন : হেক্টরপ্রতি ৫০০ কেজি।

ক্ষতিকর পোকামাকড়
লাউয়ের মাছি পোকা
এ পোকা লাউয়ের ফলের মধ্যে প্রথমে ডিম পাড়ে, পরবর্তীতে ডিম থেকে কীড়া বের হয়ে ফলের ভেতরে খেয়ে নষ্ট করে ফেলে।

দমন ব্যবস্থা
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ : মাছি পোকর কীড়া আক্রান্ত ফল দ্রুত পচে যায় এবং গাছ হবে মাটিতে ঝরে পড়ে। পোকা আক্রান্ত ফল কোনোক্রমেই জমির আশেপাশে ফেলে রাখা উচিত নয়। পোকা আক্রান্ত ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেললে মাছি পোকার বংশবৃদ্ধি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।

সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদের যৌথ ব্যবহার
কিউলিওর নামক সেক্স ফেরোমন ব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণে মাছিপোকর পুরুষ পোকা আকৃষ্ট করা সম্ভব। পানি ফাঁদের মাধ্যমে ওই ফেরোমন ব্যবহার করে আকৃষ্ট মাছি পোকাগুলোকে মেরে ফেলা যায়। বিষটোপ ফাঁদে পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী ও পুরুষ মাছি পোকা আকৃষ্ট হয় এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। ১০০ গ্রাম পাকা মিষ্টি কুমড়া কুচি কুচি করে কেটে তা থেঁতলিয়ে ০.২৫ গ্রাম মিপসিন ৭৫ পাউডার অথবা সেভিন ৮৫ পাউডার এবং ১০০ মিলি পানি মিশিয়ে ছোট একটি মাটির পাত্রে রেখে তিনটি খুঁটির সাহায্যে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে বিষটোপের পাত্রটি মাটি থেকে ০.৫ মিটার উঁচুতে থাকে। বিষটোপ তৈরির পর ৩-৪ দিন পর্যন্ত ব্যবহার করে তা ফেলে দিয়ে আবার নতুন করে তৈরি বিষটোপ ব্যবহার করতে হয়। সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ কুমড়া জাতীয় ফসলের জমিতে ক্রমানুসারে ১২ মি. দূরে দূরে স্থাপন করতে হবে।

পামকিন বিটল : পামকিন বিটলের পূর্ণ বয়স্ক পোকা চারাগাছের পাতায় ফুটো করে এবং পাতার কিনারা থেকে খেতে খেতে সম্পূর্ণ পাতা খেয়ে ফেলে এবং বয়স্ক গাছের পাতার শিরা উপশিরা গুলো রেখে সম্পূর্ণ সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এ পোকা ফুল ও কচি ফলেও আক্রমণ করে। এদের কীড়া শিকড় বা মাটির নিচে থাকা কা- ছিদ্র করে ফলে গাছ ঢলে পড়ে এবং পরিশেষে শুকিয়ে মারা যায়।

দমন ব্যবস্থা
১. চারা অবস্থায আক্রান্ত হলে হাত দিয়ে পূর্ণবয়স্ক পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে।
২. ক্ষেত সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা।
৩. চারা বের হওয়ার পর থেকে ২০-২৫ দিন পর্যন্ত মশারির জাল দিয়ে চারাগুলো ঢেকে রাখলে এ পোকার আক্রমণ থেকে চারাগুলো বেঁচে যায়।
৪. আক্রমণের হার বেশি হলে চারা গজানোর পর প্রতি মাদার চারদিকে মাটির সঙ্গে চারাপ্রতি ২-৫ গ্রাম অনুমোদিত দানাদার কীটনাশক (কার্বফুরান জাতীয় কীটনাশক) মিশিয়ে গোড়ায় পানি সেচ দেয়।

রোগবালাই
মোজাইক
চারা অবস্থায় বীজ গজানোর পর বীজপত্র হলুদ হয়ে যায় এবং পরে চারা নেতিয়ে পড়ে। বযস্ক গাছের পাতায় হলুদ-সবুজ ছোপ ছোপ মোজাইকের মতো দাগ দেখা যায়। দাগগুলো অসম আকারের। দ্রুত বড় হয়। আক্রান্ত পাতা ছোট, বিকৃত ও নিচের দিকে কোকড়ানো, বিবর্ণ হয়ে যায়। শিরা-উপশিরাও হলুদ হয়ে যায়। ফুল কম আসে এবং অধিক আক্রমণে পাতা ও গাছ মরে যায়। আক্রান্ত ফল বেঁকে যায় ও গাছের কচি ডগা জটলার মতো দেখায়। ফলের উপরি অংশ এবড়ো-খেবড়ো দেখা যায়।

প্রতিকার ব্যবস্থা
১. আক্রান্ত গাছ দেখলেই প্রাথমিকভাবে তা তুলে ধ্বংস করা। ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার রাখা।
২. ক্ষেতে বাহক পোকা উপস্থিতি দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক প্রয়োগ করে তা দমন করা।
৩. রোগাক্রান্ত গাছ থেকে কোনো বীজ সংগ্রহ ও ব্যবহার না করা।

কৃষিবিদ মো. মাহমুদুল হাসান খান*
*বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (উদ্ভিদ প্রজনন), বিএআরআই, গাজীপুর। ই-মেইল : mhasan.bari12@gmail.com

http://www.ispahaniagro.com/

promotion_ial@mmispahani.com

https://www.linkedin.com/company/ispahaniagrolimited/

https://www.youtube.com/IspahaniAgroLimited

No more offers for this product!

General Inquiries

There are no inquiries yet.

KrishiMela
Logo
Register New Account
Shopping cart