মিষ্টি তেঁতুল কলম চারা
৳ 300.00 ৳ 220.00
Item will be shipped in 3-5 business days
মিষ্টি তেঁতুল চাষ উৎপাদন প্রযুক্তি
————————————–
মিষ্টি তেঁতুল:
তেঁতুল (ইংরেজী নাম: Tamarind; বৈজ্ঞানিক নাম: Tamarinds indicia) দেখলে এমনকি নাম শুনলেও জিহ্বায় পানি আসে না এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম আছে। বিশেষ ভাবে মহিলা ও ছেলে-মেয়েদেরে কাছে ইহা খুবই যুক্তিযুক্ত। আর তেঁতুল যদি মিষ্টি হয় অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন-তেঁতুল আবার মিষ্টি হয়? হ্যাঁ হয়। অনেক বেশি মিষ্টি হয় এবং সেটি মিষ্টি জাতের তেঁতুল। যারা খেয়েছেন তারা নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন কিন্তু যারা খাননি তাদের সন্দেহ থেকেই যাবে। বাংলাদেশেরে অপ্রধান ফল সমূহের মধ্যে তেঁতুল অন্যতম। সাধারণভাবে তেঁতুলকে একটি উৎকৃষ্ট ফল হিসাবে গন্য করা যায় না, তবে ব্যবহার, বৈচিত্র ও জনপ্রিয়তার বিচারে ইহা বাংলাদেশের একটি অতি সমাদৃত ফল। আফ্রিকার সাভানা অঞ্চল এর উৎপত্তিস্থল। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও এর চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে শ্রীলংঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান, বার্মা, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া উল্লেখযোগ্য। তেঁতুল একটি বৃহদাকার চিরহরিৎ বৃ, তবে শীতকাল বেশি দীর্ঘ হলে পত্র পতনশীল স্বভাবের হয়ে যায়। পাতা পল যৌগিক, প্রতি পাতায় ১০-২০ জোড়া অনুপত্রক থাকে। তেঁতুল একটি Leguminous পরিবারের ফল । কাঁচা অবস্থায় ফলের সবুজ ত্বক শাঁসের সাথে মিশে থাকে। পাকার পর ত্বক মেটে রং ধারন করে ও শাঁস বীজ থেকে আদালা হয়ে যায়। পাকার পরও ফল অনেক দিন গাছে ঝুলে থাকে। তেঁতুলের কাঠ খুবই শক্ত, ভারী, দৃঢ় টেকসই ও সহসা ঘুন ধরে না। কাঠ দেখতে রক্তাক্ত বাদামী বর্ণের। গরুর গাড়ীর চাকা, ঢেঁকি, ঘানি, আসবাবপত্র বানাতে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুলের পাতা থেকে হলুদ রং পাওয়া যায়। বাঁকলের ট্যানিন চামড়া ট্যান করতে এবং কাঠের গুড়ো দিয়ে চামড়া অপসারণ করা যায়। তেঁতুল বীজ গরম পানিতে উত্তপ্ত করে এক প্রকার গাম/আঠা তৈরী করা হয় এবং উহা পেইন্টিং কাজে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুলের মন্ড এবং উহা ঔষধ, খাদ্য ও ধাতব পাত্র পরিষ্কারে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুল গাছের প্রতিটি অঙ্গ ব্যবহৃত হয়। এর পাতা, ফুল ও অপরিপক্ক ফল তরকারী, সালাদ ও স্যুপে ব্যবহৃত হয়। পাকা ফল টাটকা অবস্থায় খাওয়া ছাড়ও নানাভাবে প্রক্রিয়াজাত করা যায়। চাটনী, সস, শরবত তৈরীতে ইহার ব্যবহার ব্যাপক।
তেঁতুলের ঔষধি ব্যবহারঃ
আয়ুর্বেদশাস্ত্রে তেঁতুলকে বলা হয়েছে যমদূতিকা । আবার ভেষজবিদগণ একে অভিহিত করেছেন প্রাণদায়িনী ও শক্তিধারিনী হিসাবে। রোগ প্রতিকারে তেঁতুলের ব্যবহার অনেক;
১। তেঁতুলের শরবত কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় (Ali et al. 1990) তেঁতুলের আধুনিক ব্যবহার হচ্ছে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর ক্ষেতের। তেঁতুল যে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় তার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি না থাকলেও গবেষনায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত তেঁতুল খায়, তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা একেবারেই কম।
২। ভেষজবিদগনের মতে, নিয়মিত তেঁতুল খেলে শরীরে সহজে মেদ জমে না;
৩। বাতের ব্যথায় যারা কষ্ট পান তাদের জন্য তেঁতুল পাতা খুবই ভালো ঔষধ;
৪। তেঁতুল পাতার রসের শরবত খেলে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া থাকে না;
৫। অর্শ রোগে আক্তান্ত ব্যক্তিরা পুরনো তেঁতুল সিদ্ধ পানি খেলে অধিকাংশ ক্ষেতের উপশম হয়;
৬। সর্দি হলে কচি তেঁতুল পাতা সিদ্ধ রস কড়াইতে সরিষার ফোড়ন দিয়ে খেলে সর্দির উপশম হয়;
৭। সর্দি-বমিতে হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছে বলে মনে হলে, সে ক্ষেতের কাঁচা তেঁতুল পুড়িয়ে বা পুরোতন তেঁতুলের শরবত বানিয়ে খেলে এ অসুবিধা কমে যায়।
তেঁতুলে টেমারিক এসিড, মেলিক এসিড, অঙালিক এসিড, পলি স্যাকারাইড, টারটারিক এসিড, পটাশিয়াম টারটারেট, ইনভার্ট সুগার, গাম ও পেকটিন থাকে। তবে তেঁতুল ফলে প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এর মধ্যে ৮-১২% টারটারিক এসিড থাকে যা ইহার বিশেষ স্বাদের জন্য দায়ী। এ এসিড অত্যান্ত টক কিন্তু যথেষ্ট পরিমানে শর্করা থাকার দরূন ফল যতটুকু টক হওয়ার কথা তা হয় না। প্রতি ১০০ম শাঁসে ২৩০-২৮৩ কি. ক্যালরি, ০.৪৪ মিলি গ্রাম থায়ামিন, ০.১৬ মিলি গ্রাম রিবোফোবিন, ২.১ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি, ৫৪ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম ও ১ মিলি গ্রাম লৌহ থাকে।
জাতঃ
তেঁতুলের প্রধানত দুরকমের জাত দেখা যায়। টক জাত ও মিষ্টি জাত। টক জাতে এসিডের পরিমান বেশী থাকে কিন্তু মিষ্টি জাতে সাধারণত মুক্ত এসিডের (Free acids) পরিমান অনেক কম থাকে বলে মিষ্টি হয়। এ জাতটি প্রধানত টাটকা ফল হিসাবে ব্যবহার করা হয়। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়াতে এ মিষ্টি জাতের তেঁতুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে। এ তেঁতুল চাষ করে তারা বিশেষতঃ ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে। বাংলাদেশে, বাউ-জার্মপ্লাজম সেন্টার এ জাত নিয়ে কাজ করছে দীর্ঘদিন যাবৎ। এখানে মিষ্টি তেঁতুলের অনেক গুলো একসেশন আছে। এ সেন্টারের পরিচালক প্র.ড. এম. এ. রহিম থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে জাত সংগ্রহ করেন এবং তা নিয়ে গবেষণা করছেন। তবে আশার কথা হচ্ছে, এ সেন্টার থেকে খুব তাড়াতাড়ি মিষ্টি তেঁতুলের একটি জাত এদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সম হবে।
বংশ বিস্তারঃ
তেঁতুলের বংশ বিস্তার এখন পর্যন্ত প্রধানত বীজ দিয়েই করা হয়। তবে কাটিং, লেয়ারিং ও গ্রাফটিংও করা যায়। কাটিং, লেয়ারিং ও গ্রাফটিং প্রধানত এপ্রিল থেকে আগষ্ট মাসে করা হয়। কোন কোন ক্ষেতের উক্ত পদ্ধতি গুলোতে ৩০-৮০ ভাগ সফল হয়।
বীজ থেকে চারা তৈরি
ফল থেকে বীজ সংগ্রহের সময় ফেব্রুয়ারী-মার্চ। প্রতি ফলে ২-১২টি খয়েরী বা কালচে বর্ণের চকচকে বীজ থাকে। গাঢ় খয়েরী রংয়ের মোটা খোসা মুক্ত ফল সংগ্রহ করার পরই বীজ সংগ্রহ করে তা বীজ তলায় বপন করতে হয়। বীজ বপনের ১০-১৫ দিনের মধ্যে চারা গজায়। বীজ ২৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে তারপর বপন করলে অঙ্কুরোদগমের হার শতকরা ৭০-৯০ ভাগ হয়। চারা অবস্থায় তাড়াতাড়ি বাড়ে তবে একটু বড় হয়ে গেলে বৃদ্ধি কমে যায়। বীজ পলি ব্যাগে অথবা বীজতলায় দিয়ে চারা গজানো যায়। তারপর বর্ষার পরে ৫ মি. দ্ধ ৫ মি. দূরত্বে, ৭৫ সে.মি. দ্ধ ৭৫ সে.মি, দ্ধ ৭৫ সে.মি. আকারের গর্ত করে গর্তের মাটির সাথে ৪০ কেজি পরিমাণ পচা গোবর ভালো ভাবে মিশায়ে গাছ লাগানো যায়। তবে পরবর্তী বছরে গাছ বাড়ার সাথে সাথে পচা গোবর সারের সাথে অন্যান্য রাসায়নিক সারও প্রয়োগ করতে হবে।
রোগ-বালাই ও পোকা-মাকড়ঃ
তেঁতুলের উল্লেখযোগ্য পোকা-মাকড় ও রোগের আক্রমন নেই। তবে স্কেল ইনসেক্ট, মিলিবাগ, এফিড, সাদা মাছি পোকা, থ্রিপস ও ফ্রুট বোরারের আক্রমন দেখা যায়। এসব পোকা-মাকড় দমনের জন্য সাইপার মেথ্রিন গ্রুপের যে কোন ইনসিক্টিসাইড ব্যবহার করে সহজেই দমন করা যায়।
ফলনঃ
বীজের গাছের ফল আসতে ৭-১০ বছর সময় লাগে। তবে অঙ্গজ উপায়ে তৈরীকৃত গাছে ফল আসতে ৪-৫ বছর সময় লাগে। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে বছরে ২০০-৭৫০ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যেতে পারে। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এক সময় এ দেশ তেঁতুলের চাহিদা মেটাতে স্বয়ং সম্পূর্ণ ছিল কিন্তু ইটের ভাটায় তেঁতুলের কাঠ জ্বালানী হিসাবে ব্যবহৃত হওয়ায় এবং বাড়ির আশে-পাশে ও জঙ্গলে তেঁতুলের গাছ থাকায় এবং তেঁতুলের গাছে ভুত থাকা নিয়ে কুসংস্কারের কারণেও অনেক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ কারণে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার তেঁতুল আমদানি করতে হয়। এজন্য বামন জাতের তেঁতুল বাড়ির আশে-পাশে ও লম্বা জাতের তেঁতুল পাকা রাস্তার ধারে, রেল লাইনের ধারে ও পতিত জতিতে লাগানো যেতে পারে। তাহলে তেঁতুলে আমরা আমাদের চাহিদা মেটাতে সম হব এবং চাহিদার অতিরিক্ত তেঁতুল বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করা সম্ভব হবে। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া যদি তেঁতুল রপ্তানি করতে পারে, তাহরে সেই অর্থে বাংলাদেশ কেন পারবে না
No more offers for this product!
General Inquiries
There are no inquiries yet.