বল সুন্দরি কুল
বল সুন্দরি কুল দেখতে ঠিক আপেলের মতো। ওপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং। বাউকুল ও আপেল কুলের সংকরায়নের মাধ্যমে উদ্ভাবিত এই কুল চাষে সাম্প্রতিক সময়ে আগ্রহী হচ্ছেন দেশের কৃষক। ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় ওই কুল চাষে সাফল্য পেয়েছেন এক কৃষক।
40.00৳
বল সুন্দরি কুল
পুষ্টি মূল্য
কুল পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল।
ভেষজ গুণ
এটি রক্ত শোধন, রক্ত পরিস্কার এবং হজমিকারক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া পেটে বায়ু, অরুচি ও প্রদর রোগ ফুল থেকে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা হয়।
উপযুক্ত জমি ও মাটি
যে কোন ধরনের মাটিতেই বিশেষ করে দোআঁশ মাটিতে কুলের চাষ ভাল হয়। কুলগাছ লবাণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা উভয়ই সহ্য করতে পারে।
চারা তৈরি
দু’ভাবে বংশ বিস্তার করা যায়। বীজ থাকে এবং কলম তৈরি করে। কলমের চারা উত্তম কারণ এতে বংশগত গুণাগুণ অক্ষুন্ন থাকে। বলয়, তালি অথবা টি-বাডিং এর মাধ্যমে কলমের চারা তৈরি করা যায়।
চারা রোপণ
মধ্য মাঘ থেকে মধ্য চৈত্র এবং মধ্য শ্রাবণ থেকে মধ্য ভাদ্র চারা তৈরির উপযুক্ত সময়। চারা রোপণের মাসখানেক আগে চারিদিকে ১ মিটার করে গর্ত তৈরি করে নিতে হয়। লাইন থেকে লাইন এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১ মিটার করে রাখা দরকার।
সার ব্যবস্থাপনা
প্রতি গর্তে চারা রোপণের ১০-১২ দিন আগে পচা গোবর ২৫ কেজি, টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫৫ গ্রাম এবং ইউরিয়া সার ২৫০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়।
১-২ বছর বয়সের গাছের গাছ প্রতি পচা গোবর ১২ কেজি, টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫০ গ্রাম এবং ইউরিয়া সার ৩০০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হয়। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সারের পরিমানও বাড়াতে হবে। এ সারগুলো সারা বছরে ২/৩ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়। ফল ধরার পর, ফল সংগ্রহের পর ও বর্ষার পর উপরোক্ত সার প্রয়োগ করা ভাল।
সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
শুকনা মৌসুমে বিশেষ করে ফুল ও ফল ধরার সময়ে মাসে ১ বার সেচ দিরে ভাললন পাওয়া যায়। ফল ধরার পর ১৫ দিন পরপর সেচ দিলে আশানুরুপ ফলন পাওয়া যাবে। তাছাড়া গাছের গোড়া ও নালার আগাছা সব সময় পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। চারা গাছের কাঠামো মজবুত রাখার জন্য প্রথম বছরে গাচের গোড়া থেকে ৭৫ সে.মি উঁচু পর্যন্ত কোন ডালপালা রাখা যাবেনা।
ছাঁটাই
কুল গাছের বৃদ্ধি ও পরিমিত ফল ধরনের জন্য ডাল ছাঁটাই একটি জরুরি কাজ। ঠিকমতো ছাঁটাই না হলে বাগান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কলম মাটিতে লাগানোর পর একটি সতেজ ও বাড়ন্ত ডালকে উপরের দিকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনমতো সতেজ ডাল রেখে বাকিগুলো কেটে দিতে হবে। এ কাজে কাচি ব্যবহার করতে হবে ও কাঠি দিয়ে মূল গাছকে খাড়া রাখতে হবে। গাছ কাটতে হবে সমান করে, যাতে মূল গাছের কোন বাকল বা ছাল না উঠে এবং মূল গাছের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে খুব সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কাটা অংশটি কাঁচা গোবর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এরপর কান্ডটিতে প্রচুর নতুন কুশি জন্ম নিবে। ফলে উপরের ২ ফুট অংশের নতুন গজানো শাখা প্রশাখায় গাছটি ছাতার মতো আকার নিবে এবং এক পর্যায়ে একটি ঝাকড়া গাছ হবে। প্রতি বছর মার্চে গাছ ছাঁটাই করতে হবে। বড় ডাল সাবধানে করাত দিয়ে কাটতে হবে। কুল গাছে সব সময় নতুন গজানো শাখায় মুকুল আসে। এজন্য নিয়মিত ছাঁটাইয়ের ফলে গাছে বেশি পরিমাণ নতুন শাখা-প্রশাখা গজাবে ও সেই সাথে বেশি পরিমাণ ফল ধরবে।
রোগ ব্যবস্থাপনা
রোগের নাম: কুল গাছের পাউডারি মিলডিউ
ভূমিকা: এটি ছত্রাকজনিত একটি রোগ। এর আক্রমনে ফলন অনেক কমে যায়।
ক্ষতির নমুনা: আক্রান্ত ফুল ও ফল গাছ থেকে ঝরে পরে।
অনুকূল পরিবেশ: গাছের পরিত্যক্ত অংশে এবং অন্যান্য পোষক উদ্ভিদে এ রোগের জীবাণু বেঁচে থাকে। এটি বাতাসের মাধ্যমে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
বিস্তার: উষ্ণ ও ভিজা আবহাওয়ায় বিশেষকরে মেঘাচ্ছন্ন অবস্থায় এ রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে।
ব্যবস্থাপনা: গাছে ফুল দেখা দেযার পর থিওভিট ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম বা টিল্ট ২৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মি.লি মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। পরবর্তী ১৫ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করতে হবে।
কুল আমাদের দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমী ফল। কুল চাষে ইতোপুর্বে পোকামাকড়ের আক্রমন তেমন দেখা না গেলেও বর্তমানে কুল চাষ বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমন দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু পোকা কুলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করছে। ফলে কুলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও ফসলটি রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। এই পোকামাকড়ের মধ্যে কুল বাগানে ফল ছিদ্রকারী উইভিল পোকা ও টিউব বিটল বাগ পোকা অন্যতম। এ সকল পোকা কিভাবে ক্ষতি করে এবং তা দমনে কি কি করণীয় সে বিষয়ে কিছু সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।
ফলছিদ্রকারী উইভিল পোকা
ফল ছিদ্রকারী উইভিল কুল গাছের মারাত্বক ক্ষতিকারক পোকা । কয়েক বছর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুলের উন্নত জাতে এ পোকার আক্রমন দেখা যাচ্ছে। পোকার সদ্যজাত লার্ভা হালকা হলুদ বর্ণের এবং এদের পা থাকেনা। পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাঢ় বাদামী থেকে কালো রঙের হয়। পূর্ণ বয়স্ক পোকা কচি ফলে ডিম পাড়ে এবং ডিম ফুটে লার্ভা ও পিউপা থেকে পূর্ণরূপ ধারন করে।
এ পোকা কিভাবে কুলের ক্ষতি করে থাকে:
১. সদ্য জাত লার্ভা কচি ফলের বীজে আক্রমন করে এবং সম্পূর্ণ বীজ খেয়ে ফেলে। আক্রান্ত ফলের নিচে কাল দাগ পড়ে এবংবীজের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, ফল ছোট গোলাকার হয় এবং ফ্যাকাশে ও হলুদ বর্ণ ধারন করে। আক্রান্ত ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে বা গাছ শুকিয়ে যায়।
২. আক্রান্ত ফলে পোকার লার্ভা বা পিউপা বা পূর্ণ বয়স্ক পোকার মল দেখা যায়। ফলের ভিতরের অংশ খাওয়ার পর গোলাকার ছিদ্র করে পোকা বের হয়ে আসে।
৩. আক্রমনের মাত্রা বেশী হলে বাগানের সকল গাছের ফল আক্রান্ত হয়। তবে আপেল কুল ও বাউ কুলে আক্রমন বেশী হয়।
৪. সাধারণত গাছে ফুল আসার পর এ পোকার আনাগোনা দেখা যায় এবং পরাগায়নের পর গাছে ফল ধরা শুরু হলে পোকার আক্রমণ শুরু হয়।
ব্যবস্থাপনার জন্যে যা করতে হবে:
১. কুল বাগানের আশেপাশের ঝোপজঙ্গল ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
২. বল সুন্দরি কুল গাছে অসময়ে আসা ফুল ও কুড়ি নষ্ট করে ফেলতে হবে।
৩. গাছ ও মাটিতে পড়ে যাওয়া আক্রান্ত ফলগুলো সংগ্রহ করে লার্ভা বা পিউপা বা পুর্ণ বয়স্ক পোকাসহ ধ্বংস করতে হবে।
৪. বেশি আক্রান্ত এলাকায় ফুল ধরার আগেই সমস্ত বাগান ও এলাকা অনুমোদিত কার্বারাইল জাতীয় কীটনাশক বা ডাইমেথোয়েটজাতীয় কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
৫. যেহেতু পোকাটি ফলে ডিম পাড়ে এবং লার্ভা ফলের ভিতর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয় সেজন্যে আক্রমনের আগেই পোকা দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য পরাগায়নের পর ফল ধরা শুরু হলে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে।
User Reviews
Only logged in customers who have purchased this product may leave a review.
General Inquiries
There are no inquiries yet.
There are no reviews yet.