জলপাই (Indian Olive) দেশী উন্নত চারা
৳ 100.00
ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চলে জলপাইয়ের বা জয়তুনের আদি বাসস্থান। পরবর্তীতে এ ফল এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে জলপাই একটি অতি পরিচিত মুখরোচক ফল। কাঁচা ও পাকা সব অবস্থায় এ ফল খাওয়া যায়। তবে আচার, চাটনি, জ্যাম, জেলি প্রভৃতি তৈরিতে সর্বাধিক ব্যবহার হয়। পাকা ফলে প্রজাতি ভেদে ১৫-৪০ % তৈল থাকে এবং উহাতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ থাকে।
উদ্ভিদ তত্ত্বঃ জলপাই একটি সুউচ্চ বৃক্ষ এর পাতা উপবৃত্তাকার, পত্রফলকের অগ্রভাগ সুচাঁলো, ফল উপবৃত্তাকার। ফল পাকার পরও সবুজ থাকে এবং তৈলাক্ত শাঁসযুক্ত। ভূমধ্য সাগরীয় আবহাওয়াতে এ ফল ভাল হয় কিন্তু উষ্ণ ও অবউষ্ণ আবহাওয়াতে বেশী ভাল হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়াতে ভারতীয় অঞ্চলের টক জলপাই (Indian Olive) ভাল জন্মে তাই একে দেশী জলপাই হিসাবে ধরা হয়।
জলপাইয়ের প্রকারভেদ
আরবীয় ঝলপাই বা জয়তুন(Olive) যা মরুভূমির দেশসমুহে ভাল জন্মে এবং তৈল তৈরীতে বেশী ব্যবহার হয়।
ভারতীয় জাত (Indian Olive) যা ফল হিসাবে খাওয়া ও আচার, চাটনি তৈরিতে বেশী ব্যবহার হয়।
জমি নির্বাচন ও তৈরিঃ
বন্যার পানি দাঁড়ায় না এমন উঁচু বা মাঝারী উঁচু জমি নির্বাচন করে আগাছা পরিষ্কারপূর্বক ভালভাবে চাষ দিতে হবে।
রোপণের সময়ঃ
মে-অক্টোবর মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে পানি সেরে সুব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই চারা রোপণ করা যেতে পারে।
গর্ত তৈরিঃ
কলম রোপণের অন্তত ১৫-২০ দিন পূর্বে সোয়া ২৩ ফুট × সোয়া ২৩ ফুট দূরত্বে সোয়া তিন ফুট × সোয়া ৩ ফুট× সোয়া ৩ ফুট আকারের গর্ত করে উন্মুক্ত অবস্থায় রাখতে হবে। কলম রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে গর্ত প্রতি ১৫-২০ কেজি পচা গোবর, ৩০০-৪০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০-৩০০ গ্রাম পটাশ, ২০০ গ্রাম জিপসাম ও ৫০ গ্রাম দস্তা সার গর্তের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত বন্ধ করে রেখে দিতে হবে। মাটিতে রসের ঘাটতি থাকলে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
চারা রোপণ ও পরিচর্যাঃ
গর্ত ভর্তির ১০-১৫ দিন পর নির্বাচিত চারাটি গর্তের ঠিক মাঝখানে এমনভাবে বসাতে হবে, যেন চারার গোড়া ঠিক খাড়া থাকে এবং কোনভাবে আঘাত পাবার সম্ভাবনা না থাকে। চারা রোপণের পরপর পানি দিতে হবে এবং খুটিঁ ও বেড়া ব্যবস্থা করতে হবে। তারপর ১-২ দিন অন্তর পানি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
জলপাই চাষে সার ব্যবস্থাপনা
ভাল ফলন ও উন্নত মানের জলপাই পেতে নিয়মিতভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে। বারি জলপাই-১ এর ক্ষেত্রেঃ
গাছের বয়স | সারের পরিমাণ | মন্তব্য | |||
গোবর সার | ইউরিয়া | টিএসপি | এমওপি | ||
এক তিন বছর | ১০.০০-১৫.০০ কেজি | ৩০০.০০-৪০০.০০ গ্রাম | ৩০০.০০-৪০০.০০ গ্রাম | ৩০০.০০-৪০০.০০ গ্রাম | |
চার ছয় বছর | ১৫.০০-২০.০০ কেজি | ৪০০.০০-৬০০.০০ গ্রাম | ৪০০.০০-৬০০.০০ গ্রাম | ৪০০.০০-৬০০.০০ গ্রাম | |
সাত দশ বছর | ২০.০০-৩০.০০ কেজি | ৬০০.০০-৮০০.০০ গ্রাম | ৬০০.০০-৮০০.০০ গ্রাম | ৬০০.০০-৮০০.০০ গ্রাম | |
দশ বছরের ঊর্ধ্বে | ৩০.০০-৪০.০০ কেজি | ১.০০ কেজি | ১.০০ কেজি | ১.০০ কেজি |
প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
উল্লিখিত সার সমান তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম কিস্তি বর্ষার শুরুতে (বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য) মাসে, ২য় কিস্তি বর্ষার শেষে (ফল আহরণের পর) এবং শেষ কিস্তি শীতের শেষে (মাঘ-ফাল্গুন মাসে) প্রয়োগ করতে হবে। সারগুলো গাছের গোড়া থেকে প্রায় পৌণে দুইফুট থেকে সোয়া ৩ ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়ে শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত এলাকা পর্যন্ত মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে সেচ দিতে হবে।
সেচ প্রয়োগ ও পানি নিষ্কাশনঃ
শুকনো আবহাওয়া ও খরা সহ্য করতে পারে বিধায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, মাটি ও গাছের বয়সের উপর ভিত্তি করে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। শীতকালে ৪-৫ সপ্তাহ ও গরমকালে ২-৩ সপ্তাহ পর পর সেচ দিলে ভাল হয়। ফল ধরার পর কমপক্ষে দুবার সেচ দিতে হবে। বর্ষা মৌসুমে গাছের গোড়ায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সে জন্য দ্রুত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
জলপাইয়ের পাতা পোড়া রোগ
রোগের লক্ষণঃ
এ রোগে আক্রান্ত হলে পাতায় প্রথমে হলুদ দাগ পড়ে পরে তা বাদামী হয় । পাতা শুকিয়ে যায়।
রোগের সমন্বিত ব্যবস্থাপনাঃ
রোগ দেখা দেয়ার পূর্বে করণীয়ঃ
১.ফল সংগ্রহ শেষ হলে গাছের মরা ডালপালা, ফলের বোটা, রোগ বা পোকা আক্রান্ত ডাল পালা ও অতিঘন ডাল পালা ছাটাই করে পরিস্কার করে দিন
২. পরিস্কার করার পর একটি ছত্রাক নাশক ও একটি কীটনাশক দ্বারা পুরো গাছ ভালভাবে স্প্রে করুন
৩. নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করুন।
রোগ দেখা দেয়ার পর করণীয়ঃ
১. আক্রান্ত ডাল বা পাতা অপসারণ করা ২. ডাইথেন এম ৪৫ বা রিদোমিল গোল্ড ২ গ্রাম / লি. হারে পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করা।
জলপাইয়ের স্ক্যাব বা দাদ রোগ
রোগের লক্ষণঃ এ রোগের আক্রমনে ফলে ছোট বা মাঝারি আকারের কাল দাগ পড়ে।
রোগ দেখা দেয়ার পূর্বে করণীয়ঃ
গাছের পাতা শুকনো থাকা আবস্থায় বাগানের পরিচর্যা করা ও বাগান পরিচ্ছন্ন রাখা।
রোগ দেখা দেয়ার পর করণীয়ঃ
# টিল্ট ২৫০ ইসি ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা
ফল সংগ্রহঃ
বর্ষার প্রারম্ভে এপ্রিল-মে মাসে গাছে ফুল আসে এবং শীতের পূর্বে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে ফল পাকে। পাকার পরও ফল সবুজ থাকে। তাই ফলের আকার বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে ফল সংগ্রহ করতে হবে। ভাল যত্ন নিলে পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে প্রতি বছর ২০০-২৫০ কেজি ফল পাওয়া যায়।
সতর্কতাঃ
ডালপালায় ঝাকুনি দিয়ে ফল মাটিতে ফেললে ফল আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তবে গাছের নিচে জাল ধরে শাখায় ঝাকুনি দিয়েও ফল সংগ্রহ করা যায়।
General Inquiries
There are no inquiries yet.