ক্যামেলিয়া ফুলের কলম চারা
৳ 600.00
Item will be shipped in 3-5 business days
ফুলের নাম- ক্যামেলিয়া
বৈজ্ঞানিক নাম- Camellia japonica
ক্যামেলিয়াকে ’শীতের গোলাপ’ বলা হয়। ওর ডাকনাম ‘বুরবন ক্যামেলিয়া’। গোলাপ, কার্নেশন, চন্দ্রমল্লিকা, আজেলিয়ার পাশে ক্যামেলিয়ার গর্বিত আসন নির্দিষ্ট আছে। শীতে ফুল ফোটে তবে বর্ষার বৃষ্টি তার প্রিয়, কিন্তু গাছের গোড়ায় বৃষ্টির পানি জমা চলবে না। চা গাছের মতো এর পরিচর্যা চাই।
আবাদিত ক্যামেলিয়ার মধ্যে ‘এলিগানস’ হলো বড় টকটকে লাল, তাতে মাঝে মাঝে সাদা ডোরা দাগও থাকে। ‘গুলিও নুসিও’ হলো লাল থেকে পিংক পাপড়ির এবং পুংকেশর হলদে। ‘মাথোটিনা আলবা’ হলো ধ্রুপদী সাদা ফুল। ‘দ্য সিজার’ হলো হালকা ক্রিমসন সেমি-ডাবল পাপড়ির ফুল। এরা ক্যামেলিয়া-জগতের রূপসী তারকা। তবে সবচেয়ে মূল্যবান বা গৌরবময়ী বলা হয় ‘আলবা প্লিনা’ ক্যামেলিয়াকে, তার সৌন্দর্যখ্যাতি বিশ্বজুড়ে। কমনীয় সৌন্দর্য তার ভূষণ।
ক্যামেলিয়া নামটি এসেছে জেস্যুইট পাদ্রি ও উদ্ভিদবিদ জর্জ ক্যামেল থেকে। উদ্ভিদবিদ কার্ল লিনিয়াস একে তাই ‘ক্যামেলিয়া জাপোনিকা’ নামে অভিহিত করেন। জাপোনিকা নামাংশটি এসেছে এনপেলবার্ট ক্যাসপার থেকে, যেহেতু জাপানে এই ফুলের প্রথম বর্ণনা বিশ্ববাসীকে শুনিয়েছিলেন সে জন্য।
জাপানি সামুরাই যোদ্ধারা যুদ্ধে যাওয়ার সময় লাল ক্যামেলিয়া দেখলে অশুভ বলে বিশ্বাস করতেন। এ জন্য তাঁদের যুদ্ধযাত্রার সময় লাল ফুলের টব ঘর থেকে বের করে বাগানের পেছনে রেখে দেওয়া হতো। লাল ক্যামেলিয়া রাখা হতো বাগানের পেছনের সারিতে। কিন্তু সাদা কেমেলিয়া শুভ। আর যত অশুভ বেশি বয়সী গাছ, বুড়ো গাছে ভূত-প্রেত থাকে। আর টকটকে লাল ক্যামেলিয়া বাসি হয়ে ঝরে পড়লে কেমন শব্দ হয়, জানেন? নরম ঘাসের ওপর শক্ত জিনিস পড়লে যেমন ‘ধুপ’ শব্দ হয়। অর্থাৎ তীক্ষ্ম তরবারির এক কোণে কাটা মুণ্ড ঘাসের ওপর পড়লে এ রকম শব্দ হয়। প্রাচীন জাপানি সাহিত্যে এই কল্পনাচিত্র পাওয়া যায়।
ফুলের সৌন্দর্যের জন্যই প্রাণসম্রাজ্ঞী চায়ের জাতবোন ক্যামেলিয়ার সুনাম ও গর্ব। অন্তত হাজার বছর ধরে চীন-জাপানের অভিজাত মহলে এর উজ্জ্বল অভিসার চলে। ইংল্যান্ডের রবার্ট জেমস নিজ দেশে ক্যামেলিয়ার চারা নিয়ে যান ১৭৩৯ সালে। সেই শুরু ক্যামেলিয়ার ইউরোপ জয়। ১৮০৭ সালে আমেরিকার নার্সারিতে গ্রিনহাউস উদ্ভিদ হিসেবে চাষ শুরু। এখন ইউরোপের বনেদি বাগানে ক্যামেলিয়া থাকবেই। রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ফুল ফুটলে সেটি সাঁওতাল মেয়েটি খোঁপায় পরে নেয়। জাপানিরা ১১ শতাব্দীতে চিত্রকলা ও চীনামাটির বাসনপত্রে ক্যামেলিয়া আঁকতে শুরু করেন। চায়ের পেয়ালা, ফুলদানি প্রভৃতি তৈজসপত্রে তার কী দাপট! এতে একস্তর পাপড়ির ফুলই প্রথম আঁকা হয়। চীনে সং রাজবংশ সাদা পাপড়ির ক্যামেলিয়াকে প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন। চীনা নববর্ষ ও বসন্ত উৎসবে এই ফুল দেবতার উদ্দেশে নিবেদন করা হতো। নববর্ষের শুভর প্রতীক এই ফুল। কিন্তু চীনা নারীরা ক্যামেলিয়াকে কখনো খোঁপায় গুঁজতেন না। কারণ ক্যামেলিয়া কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ফুটতে দীর্ঘ এক মাস সময় নেয়। তার অর্থ_যে মেয়ে এই ফুল পরবেন, তিনি সহজে সন্তানবতী হতে পারবেন না।
ক্যামেলিয়া গাছ না ছাঁটলে ২০-৩০ ফুট উঁচু হয়ে যায়।কাজেই ক্যামেলিয়া ও চা গাছকে ক্ষুপজাতীয় বলা যাবে না। বাঁচে অন্তত এক শ বছর। বাড়তে দিলে এত উঁচু হয়ে যেত যে ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না।
একস্তর পাপড়ি ও বহু পাপড়ির ফুল হয়। চীন, জাপান, কোরিয়া ছাড়াও সারা বিশ্বে ২০০০ রকমের বেশি আবাদিত ও হাইব্রিড ফুল হয়। আর বেশি দেরি নেই নীল ও কালো রঙের ক্যামেলিয়া উৎপন্ন হবে। মনকাড়া, নজরকাড়া ক্যামেলিয়া চা বাগানে উৎপন্ন হবে খুব সহজে। কারণ ক্যামেলিয়া হলো চা-পরিবারের গরবিণী কন্যারত্ন। গোলাপ, চেরি, আপেলও একই বড় পরিবারের গর্বিত সদস্য। ক্যামেলিয়াকে আদরণীয় ভালোবাসায় সিক্ত করেছেন জাপানি ও চীনারা।
ক্যামেলিয়া চিরসবুজ চা-গোত্রীয় গাছ। তাই দেখতে অনেকটা চা গাছের মতোই। জন্মস্থানে ১০ মিটার বা ততোধিক উঁচু হলেও আমাদের দেশে গুল্মবৎ, ঝোপাল, দুই থেকে আড়াই মিটার উঁচু। পাহাড়ি বাগানের সৌন্দর্যবর্ধক। ফুল সিঙ্গেল বা ডাবল। পাতা চকচকে সবুজ, আকর্ষী, গড়ন অনেকটা চা-পাতার মতোই। এদের প্রজাতি সংখ্যা ৪৫ বা ততোধিক। আলোচ্য প্রজাতিটি (Camella japonica) জন্মে এশিয়ার শীতল ও উপ-উষ্ণ অঞ্চলে। জলাভূমি বা অধিক শুষ্কতা এ গাছের জন্য ক্ষতিকর। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে চাষের জন্য ছায়াযুক্ত স্থান প্রয়োজন। সাদা ও লাল ফুলের গাছ সংখ্যায় বেশি। প্রতিটি ফুলেই ৫টি বৃতি ও অসংখ্য পুংকেশর থাকে। ছায়াঘরে এ ফুলের চাষ সুবিধাজনক। কারণ সেখানে তাপমাত্রা ৬০-৬৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট রাখা সম্ভব। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী নতুন গাছে প্রথমবার ফুল ভালো হয়। পরের বছরগুলোতে মানের অবনতি ঘটতে থাকে। তিন-চার বছর পর ফুল আয়তনে বেশ সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। সাধারণত বীজ, কলম ও কুঁড়ির মাধ্যমে চাষ।
পৃথিবীর শীতপ্রধান দেশগুলোতে ক্যামেলিয়ার অসংখ্য ভ্যারাইটি দেখা যায়। অনেকেই মনে করেন আমাদের দেশে ক্যামেলিয়ার কোনো অস্তিত্ব নেই। ধারণাটি পুরোপুরি সত্য নয়। কারণ স্বল্পসংখ্যক ক্যামেলিয়া আছে বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশে। আর আছে মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানে। তবে সব বাগানে নয়। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে শ্রীমঙ্গল এলাকায়। দুষ্প্রাপ্যতার কারণে এ ফুলটির সঙ্গে আমাদের তেমন একটা চেনাজানা নেই। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। যখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শেষ বারের মতো ঢাকায় আসেন। তখন বলধা গার্ডেনসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন তিনি। বলধা গার্ডেনে বেড়াতে এসে কবি এখানকার জয় হাউসে উঠেছিলেন। এক রাত কাটিয়েছিলেনও তিনি।
বলধা গার্ডেনের হাজারো উদ্ভিদের ভিড়ে ক্যামেলিয়া কবিকে বেশি আকৃষ্ট করেছিল। তাই ক্যামেলিয়া ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কলকাতা ফিরে গিয়ে ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের ২৭ শ্রাবণ কবি তার বিখ্যাত ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতা লিখেছিলেন, যা পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থের অর্ন্তগত। পরবর্তী সময়ে এ কবিতা নিয়ে চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে।
সেই বিখ্যাত কবিতার কয়েকটি লাইন এরকম : “যেদিন নেমে আসব তার দু দিন আগে তনুকা বললে,
“একটি জিনিস দেব আপনাকে, যাতে মনে থাকবে আমাদের কথা–
একটি ফুলের গাছ।’
এ এক উৎপাত। চুপ করে রইলেম।
তনুকা বললে, “দামি দুর্লভ গাছ,
এ দেশের মাটিতে অনেক যত্নে বাঁচে।’
জিগেস করলেম, “নামটা কী?’
সে বললে “ক্যামেলিয়া’।
চমক লাগল– আর-একটা নাম ঝলক দিয়ে উঠল মনের অন্ধকারে।
হেসে বললেম, “ক্যামেলিয়া, সহজে বুঝি এর মন মেলে না।’
তনুকা কী বুঝলে জানি নে, হঠাৎ লজ্জা পেলে,
খুশিও হল।”
পুরান ঢাকার বলধা গার্ডেনের সিবলি অংশে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে ‘ক্যামেলিয়া হাউস’। ক্যামেলিয়া হাউসে বিভিন্ন ধরনের ক্যামেলিয়া ফুলগাছ দিয়ে ভরা। ডিসেম্বর মাস এলেই গাছে ঝেঁপে আসে ক্যামেলিয়া ফুল। এর পাতা গাঢ় সবুজ। ক্যামেলিয়া দেখতে অনেকটা গোলাপ ফুলের মতো হলেও সৌন্দর্যে ক্যামেলিয়ার তুলনা শুধু ক্যামেলিয়াই।
No more offers for this product!
General Inquiries
There are no inquiries yet.