কৃষি নিয়ে সফল হওয়ার স্বপ যারা দেখেন তারা অনেকেই ব্যার্থ হয়ে যান সঠিক পরিকল্পনা ও কৃষি উদ্দোক্তা হওয়ার প্রয়োজনীয় গুনাবলীর অভাবে অচিরেই কৃষি উদ্দোক্তা হওয়ার স্বপ্ন, দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়ে যায়।চলুন দেখে নেই একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কি কি গুনাবলী থাকতেই হবে আপনার মাঝেঃ
পরিশ্রমী
কৃষি কাজের প্রথম সিড়ি হচ্ছে পরিশ্রম। যে পরিশ্রমী নয়, তার জন্য কৃষি কাজ নয়। তার জন্য কৃষি কাজের প্রথম সিড়িতেই পা রাখা সম্ভব নয়।যখন একজন কৃষক রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কঠোর পরিশ্রম করবে, তখনই সে সোনার ফসল ফলাতে পারবে।
পরিশ্রমের ফলে শরীরে যদি কড়া নাইবা পড়লো… তাহলে সে কীভাবে কৃষক হবে?এই উষর পৃথিবীকে বেহেস্ত/স্বর্গের রূপে রূপান্তর করাটা সামান্য কোন পরিশ্রমের কাজ নয়।আর যে কৃষিকাজে সম্পূর্ণ Labors এর উপর নির্ভরশীল… তার কৃষি মাঠ ছেড়ে পালায়ন করার দৃশ্যটা দেখার জন্য আপনাকে বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না।
ঝুকি গ্রহণ
কৃষি পেশাটা অনেকাংশে প্রাকৃতির উপর নির্ভরশীল। তাই সুদক্ষ ও অভিজ্ঞ কৃষকের ত্রুটিহীন পরিচর্যার পরও অনেক সময়…
অতি বৃষ্টি – অনাবৃষ্টি, বন্যা, শিলা বৃষ্টি, ঝড়, খরা ইত্যাদির মাধ্যমে কখনো আবাদের আংশিক ক্ষতি হয় আবার কখনও পুরোপুরিই বিনাষ হয়।আবার কখনও উৎপাদিত মূল্যের পতনও হয়ে থাকে।সুধু সম্পদের নয়, সাপ-বিচ্ছুর কারনে জানেরও ক্ষতি হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।সবকিছু জানার পরও এতো ঝুকি মাথায় নিয়ে কৃষি কাজে নিজেকে উৎসর্গ করতে পারলেই সে কৃষক হতে পারবে।
অধ্যাবসায়
প্রতি বছর কাঙ্খিত লাভ নাও হতে পারে। আবার কখনো বা মুনাফার পুরোপুরি বিনাশ হতে পারে। এতে যদি আপনি মাঠ ছেড়ে পালায়ন করেন, তাহলে আপনি পুরোপুরি কৃষক নন। সে কারনে আপনি কৃষি সেক্টরে পা রাখার পূর্বে আপনাকে এ সকল বিষয় মাথায় রেখে মানষিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে হবে।
উদ্ভাবক
কৃষিতে টিকে থাকতে হলে আপনাকে উদ্ভাবক বা কৌশলী হতে হবে। উন্নত কৃষি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। কৃষিতে কখন কি সংযোজন-বিয়োজন হচ্ছে তার প্রতি ধারণা থাকতে হবে। কখন কী জাত উদ্ভাবন হচ্ছে তার বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে। পরিবর্তনশীল আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে তাল মিলিয়ে আপনাকে ফসলের জাত বা অন্য কিছু নির্বাচন করতে হবে। আপনাকে নতুন কিছু চিন্তা করতে হবে। যা অন্যরা ভাবে নাই, তা আপনাকে ভাবতে হবে। যা অন্যরা করে নাই, তা আপনাকে করতে হবে। আপনাকে নতুন কিছু উদ্ভাবন করার চেষ্টা করতে হবে।
উদ্ভিদের প্রতি ভালোবাসা
উদ্ভিদ বা গাছের প্রতি ভালোবাসা না থাকলে সুধু Business mind নিয়ে কৃষক হওয়া যায় না। আপনার গাছে আঘাত লাগলে যখন আপনার মনে আঘাত লাগবে, গাছ হেলে পড়লে তা ঠিক না করা পর্যন্ত আপনার মনে যদি অস্বস্তি লাগে, গাছের কেনো সমস্যায় যখন আপনি অস্থির হয়ে ওঠেন… তখন বুঝবেন আপনি বৃক্ষপ্রেমি।আপনার বাড়ির হাস-মুরগীর খাবারে কুকুর-বিড়াল ভাগ বসালে যেমন আপনার ক্ষোভ হয়, ঠিক তেমনি আপনার উদ্ভিদের খাদ্যে যদি কেও ভাগ বসায়, তাহলে তাকে সবচেয়ে বড় শত্রু মনে করতে হবে। তাহলে দেখবেন, আপনার বিলে কোনো আগাছা থাকবে না।
উপলব্ধি
একজন ডাক্তার যেমন রোগীকে দেখেই তার রোগ উপলব্ধি করতে পারেন, একজন মা যেমন তার সন্তানের সমস্ত প্রয়োজন বা সমস্যা না বলা সত্বেও অনুভব করতে পারেন, ঠিক তেমনি একজন কৃষককে উদ্ভিদের সাথে এমন সম্পর্ক বা বন্ধুত্ব তৈরী করতে হবে যেনো উদ্ভিদের সমস্যাটা সে বুঝতে পারে। উদ্ভিদের কখন কী প্রয়োজন, কখন খাদ্যের অভাব হচ্ছে, কখন রোগ হচ্ছে, কখন কী চাচ্ছে, কী চাচ্ছে না এগুলো কেবল একজন অভিজ্ঞ উদ্ভিদ প্রেমিই বলতে পারবে।
গাছ কখনও কম খাদ্য গ্রহণ করে আবার কখনও বেশি। গাছকে ক্যালকুলেশন করে খাবার দিয়ে সব সময় সফল হওয়া যায় না। পরিস্থিতি বা অবস্থা বুঝে ট্রিট করতে হবে। তাই গাছের সাথে একাত্ম হয়ে তার অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এতেই প্রকৃত কৃষক হওয়া যাবে।
বিক্রেতা
আপনাকে বিক্রেতা হতে হবে। একজন বিক্রেতার যে গুন থাকে, সে গুনের কিছুটা আপনাকে অর্জন করতে হবে।আপনি কঠোর পরিশ্রম ও খরচ করে ফসল উৎপাদন করার পর যদি তা সময়মত সঠিক মূল্যে বিক্রি করতে না পারেন, তাহলে আপনার কৃষি কাজ অব্যাহত রাখতে পারবেন না।সুধুমাত্র এ সমস্যাটার কারনেই কৃষক আজ স্বচ্ছল নয়। ব্যবসায়ীরা যেখানে ১ কেজী সবজি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি করছে, সেখানে আপনাকে মাত্র ১৫ টাকা ধরিয়ে দিচ্ছে।তাই আপনাকে একজন ভালো বিক্রেতা হতে হবে।
সততা ও উদারতা
কৃষকের সবচেয়ে বড় বন্ধু হলো মাটি ও গাছ-পালা। তাই কৃষককে তার বন্ধুর গুনাবলিগুলো অর্জন করতে হবে।গাছ কখনও কাওকে প্রতারণা করে না। নিম পাতা তেতো, তেতুল টক, পাকা আম মিঠা, নাগা মরিচ ঝাল। এর ব্যতিক্রম হয় কি? নাতো!তাহলে কৃষককেও এমন স্পষ্ট হতে হবে। কথা যেমন, কাজও তেমনই হতে হবে। প্রতারণা কৃষকের বৈশিষ্ট্য নয়। জৈব বালাইনাষকে আগ্রহী হয়ে উঠতে হবে।মাটি হলো ধৈর্যের প্রতিক। তাকে যতই লাথি-ঘুষি দেন, ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেভ করেন, সে কখনো জবাব দেয় না। তা গ্রহণ করে শুদ্ধ করে আবার ফুল-ফল উপহার দেয়।প্রকৃত কৃষকও এমনই গুনের অধিকারী।তবে সাবধান। কৃষক কিন্তু সাধারণ কোনো মানুষ নয়। ক্রুদ্ধ ভূমি কম্পনের মাধ্যমে যেমন নিমিষেই সব কিছু লন্ডভন্ড করে দিতে পারে, তেমনি একজন কৃষকও চাইলে আপনাকে অনেক কিছু করতে পারে।আপনি অমৃত পান করবেন নাকি বিষ পান করবেন, সেটা কিন্তু একজন কৃষকই নির্ধারণ করছেন।
সংগৃহীত.