ক্রমাগত খাদ্যে ভেজাল, কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার, শাক সবজি এবং ফল-মূল টাটকা রাখতে নানা রকম ক্ষতিকর ক্যামিকেল এর ব্যবহারে স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা নিজেরাই নিজেদের জন্য শাক সবজি উৎপাদনের চিন্তা করছে। অনেকে অল্প পরিসরে ছাদ বাগান ও কিচেন গার্ডেন শুরু করলেও তা বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতার কারনে ব্যপকহারে বিস্তৃত হচ্ছে না।তাই এই তাজা ও নিরাপদ শাক-সবজির ঘাটতি মেটাতে মাইক্রোগ্রিন একটি আধুনিক সংযোজন।
মাইক্রোগ্রিন সকলের টাটকা ও নিরাপদ সবজি চাহিদা পূরণে সক্ষম। মাইক্রোগ্রিন গুলো অতি অল্প বয়সে আহরন করা হয় বিধায় মাইক্রোগ্রিন গুলো খুবই কোমল,সূক্ষ এবং অত্যন্ত স্বাদ যুক্ত হয়ে থাকে।এগুলি ক্রান্চি কিন্তু মুখের মধ্যে গলে যাবপ এমন টেক্সচার যুক্ত হয়ে থাকে এবং নানা রকম স্বাদের সমন্বয় পাওয়া যায়, মিষ্টি থেকে টক হালকা ঝাঝালো স্বাদ যুক্ত ও হয়ে থাকে।মাইক্রোগ্রিন গুলো নানা রকম রঙের বৈচিত্র্যময় হয়ে থাকে সবুজ,লাল,বেগুনি বা সাদা রঙ আপনার খাবারে এনে দেবে দারুন আকর্ষণ। খাদ্যে মাইক্রোগ্রিন যুক্ত করার জন্য আপনার স্বাভাবিক খাদ্যতালিকা বা ডায়েটে কোন পরিবর্তন করতে হবে না। মাইক্রেগ্রিন আপনি আপনার যেকোন খাবারে যুক্ত করতে পারেন সালাদ, বার্গার, স্যুপ বা যেকোন তরকারি তে। আমাদের দেশে বড় বড় হোটেল রেস্তোরাঁ তে মাইক্রোগ্রিন অত্যন্ত সীমিত পরিসরে ব্যবহার হচ্ছে সালাদ ও কোন খাবার আকর্ষণীয় করতে।
মাইক্রোগ্রিন কি?
মাইক্রোগ্রিন হচ্ছে কম বয়সী সবজি বা ভেষজ উদ্ভিদের চারা।মূলত ৭-১০ দিন বয়সী চারা গাছ সরাসরি বা রান্না করে খাওয়া হয়ে থাকে,যেখানে সাধারণত শাকসবজি কয়েকমাস যাবৎ সময় লাগে খাওয়ার উপযোগী হতে।
মাইক্রোগ্রিন উৎপাদনের পদ্ধতি?
মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন পদ্ধতি খুবই সহজ এবং যে কেউ এবং যেকোন বয়সের মানুষ মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন করতে পারবেন।
নিম্নে পর্যায়ক্রমে উৎপাদন প্রক্রিয়া আলোচনা করা হলোঃ
১.সর্ব প্রথমে মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন প্রযুক্তি সম্পর্কে পরিষ্কার একটি ধারনা অর্জন করতে হবে। এই ধারনা ও অভিজ্ঞতা অর্জনে আমাদের এই লিফলেটটি একটি অগ্রগন্য ভূমিকা পালন করবে ইনশা আল্লাহ।
২. মাইক্রোগ্রিন কিট সংগ্রহ করে নেবেন। (Drip Irrigation Bd তে পাবেন)
৩. মাইক্রোগ্রিন গ্রেড বীজ বা অর্গানিক বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
৪.এই লিফলেট উল্লেখিত উপায়ে বীজ জীবানুমুক্ত করে নিতে হবে।
৫.অতপর মাইক্রোগ্রিন কিটে জীবানুমুক্ত বেডিং মিডিয়া যেমনঃ মাটি/ কোকোপিট/জুট ফেল্ট দিতে হবে।
৬.মাইক্রোগ্রিন কিটে বেডিং মিডিয়া দিয়ে এর upor বীজ আলতো করে ছড়িতে দিতে হবে।
৭.বীজ ছড়িয়ে দিয়ে এর উপর পানি স্প্রে করতে হবে।
৮.পাত্রটিকে ঢেকে রাখতে হবে যাতে পোকামাকড় ও ছত্রাকের আক্রমন হ্রাস করা যায়।
৯. আলোবাতাস পূর্ণ জায়গায় রাখতে হবে এবং বেডিং মিডিয়া শুকিয়ে গেলে পানি স্প্রে করতে হবে।
১০. ৫-৭ দিন পরই কাটার উপযোগী হয়ে যায় মাইক্রোগ্রিন গুলো।
১১. ধারালো পরিষ্কার ও জীবানুমুক্ত ছুরি দিয়ে মাইক্রোগ্রিন গুলোকে কেটে নিতে হবে।এমন ভাবে করতে হবে যাতে বেডিং মিডিয়ার কোন অংশ এসে মাইক্রোগ্রিন এর কোয়ালিটি খারাপ করতে না পারে। ১২. এই পদ্ধতিতে বার বার মাইক্রোগ্রিন উৎপাদন করা সম্ভব
বীজ জীবানুমুক্ত করন:
বেশিরভাগ মাইক্রোগ্রিন এর বীজ সাধারন মানের বীজ হয়ে থাকে।মাইক্রোগ্রিন উৎপাদনে কোন ধরনের হাইব্রিড বা উচ্চফলনশীল বা জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে উৎোদিত বীজ ব্যবহার না করাই ভালো।
বীজ জীবানুমুক্ত করার সুবিধা সমূহঃ
১.ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ কমিয়ে দেয়।
২.নীরোগ মাইক্রোগ্রিন উৎপাদিত হয়।
৩.দ্রুত অঙ্কুরোদগম হয়, খোসা নরম হওয়ার ফলে।
৪.বীজের ডরমেন্সি বা সুপ্তাবস্থা ভেঙ্গে যায়।
৫.শক্তিশালী চারা উৎপাদিত হয়।
বীজ জীবানুমুক্ত করার পূ্র্বে বীজ পরিষ্কার করা বেশি জরুরী। বীজের সাথে মাটি,বালি, ফলের অংশ, আগাছার বীজ ও মৃত বীজ ইত্যাদি থাকতে পারে তাই বীজ পরিষ্কার করে নিতে হবে।
বীজ পরিষ্কার করার পদ্ধতিঃ
১.বীজ একটি বড় পাত্রে নিয়ে পানি দিয়ে কচলে ধুয়ে নিতে হবে।
২.বীজ পাত্রে পানির মধ্যে রেখে স্থির করতে হবে দেখা যাবে মৃত বীজ ও আগাছার বীজ সহ ফসলপর অংশ, আাগাছার অংশ ইত্যাদি ভেসে উঠবে এবং এগুলোকে অপসারন করতে হবে।
৩. বীজগুলোকে কয়েকবার পানি দিয়ে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
মাইক্রোগ্রিন কিটের ব্যবহারঃ
মাইক্রোগ্রিন কিট মাইক্রোগ্রিন উৎপাদনে একটি আধুনিক সংযোজন। এই কিটের তিনটি অংশ থাকে যথাঃ বোলস, সীড ট্রে এবং লিড বা ঢাকনা।ঢাকনা থাকায় বাইরে থেকে রোগ জীবানু প্রবেশ করতে পারে না। ফুডগ্রেড ভার্জিন প্লাস্টিক ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরিকৃত ফলে স্বাস্থ্য ঝুকি নেই।
জালের ন্যায় একটি লেয়ার থাকায় অতিরিক্ত পানি গিয়ে নীচের পাত্রে জমা হয় ফলে বীজ বা শিকড় পচে না৷ এবং সহজেই অতিরিক্ত পানি বের করে ফেলা যয়।বার বার ব্যবহার করা যায়টেকসই এবং মজবুত।