ব্রোকলির উৎপত্তি ইতালিতে। ব্রোকলিকে ইতালিয়ান ব্যোকলি বলা হয়। ইতালি ভাষায় Brocco শব্দ থেকে এর উৎপত্তি হয়েছে।চলুন জেনে নিই অতি পুষ্টিকর আধুনিক ব্রোকলি চাষ সম্পর্কে
আধুনিক ব্রোকলি চাষে জলবায়ু :
ব্রোকলির নাতিশীতোষ্ণ সবজি। ব্রোকলির সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য cold ও আদ্র জলবায়ু উত্তম। এটি উচ্চ তাপমাত্রা ও খরাসহিষ্ণু। ১৫ ডিগ্রি- ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস মাসিক গড় তাপমাত্রা ব্রোকলি চাষের জন্য সবচেয়ে অনুকূল। বাংলাদেশের শীতকালীন আবহাওয়া ব্রোকলি চাষের জন্য খুব উপযোগী। পর্যাপ্ত সূর্যালোকেরও প্রয়োজন।
আধুনিক ব্রোকলি চাষে মাটি :
আধুনিক ব্রোকলি চাষ ,ব্রোকলির সফল চাষের জন্য মাটিতে যথেষ্ট পরিমাণে জৈবসার থাকা প্রয়োজন। মাটি উর্বর ও মাটির অম্ল-ক্ষারত্ব (PH) ৬.০-৭.০ হলে ভালো। বেলে দোআঁশ, দোআঁশ ও এঁটেল মাটিতে ব্রোকলি চাষ ভালো হয়। তবে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন জমি ব্রোকলি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
আধুনিক ব্রোকলি চাষে জাত :
ব্রোকলি ঠাণ্ডা আবহাওয়ার ফসল বলে বাংলাদেশে শুধু রবি মৌসুমে এর চাষ হয়। বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, রায়খালীর বিজ্ঞানীগণ নিরলস প্রচেষ্টায় বারি ব্রোকলি ১ জাত মুক্তায়িত করেন। উল্লেখযোগ্য বিদেশি জাত হচ্ছে ডিসিক্কো, এল-সেন্ট্রো, প্রিমিয়াম ক্রপ, গ্রিন কমেট, গ্রিন ডিউক, ক্রসেডার, টপার ৪৩, ডান্ডি, ইতালিয়ান গ্রিন, স্প্রডিটিং টেক্সাম ১০৭, ওয়ালআম ২৯ এসব।
আধুনিক ব্রোকলি চাষে বীজ বপনের সময় :
ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য আগস্ট-মধ্য অক্টোবর) মাস পর্যন্ত। কার্তিক (মধ্য-নভেম্বর) মাস পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বোনা যায়। তবে সেপ্টেম্বরের শেষে সপ্তাহ বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
আধুনিক ব্রোকলি চাষে বীজের পরিমাণ :
এক হেক্টরে চাষের জন্য ১৫০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
আধুনিক ব্রোকলি চাষে দূরত্ব :
চারা থেকে চারা-৫০ সেন্টিমিটার।
সারি থেকে সারি-৬০২ সেন্টিমিটার।
আধুনিক ব্রোকলি চাষে জমি তৈরি :
সারা দিন পর্যন্ত সূর্যালোক পায় এমন জমির মাটি প্রথমে ভালোভাবে চাষ দিয়ে প্রস্তুত করে নেয়া উচিত। জমিতে ৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা ও সমান তৈরি করে নিতে হবে। দুই সারিতে চারা রোপণের জন্য জমির চওড়া ও ১৫-২০ সেন্টিমিটার উঁচু মিড়ি বা বেড তৈরি করতে হবে। দুটি পাশাপাশি মিড়ির মাঝখানে যাতায়াত ও পানি নিষ্কাশনের জন্য ৩০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত এবং ১০-১৫ সেন্টিমিটার গভীর নালা রাখতে হবে। নালার মাটি তুলে মিড়ি বা বেড উঁচু করতে হবে।মাটির অম্লাক্ষারক (PH) ৫.৫ এর নিচে হলে হেক্টর প্রতি ১০০ কেজি চুন প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
মালচিং পেপার এ ব্রোকলি চাষঃ
মালচিং পেপার কৃষিতে এক আধুনিক আবিষ্কার । মালচিং পেপার ব্রোকলি চাষে একটি যুগান্তকারী সংযোজন। ব্রোকলি তে প্রচুর পরিমান মালচিং এর দরকার হয় কারন মাটির সংস্পর্শে এসে পচে যায় এবং আগাছাও অনেক সমস্যা করে থাকে তাই মালচিং পেপার দিয়ে চাষ করলে ফল পচে যায় না। আগাছা হয় না, মাটিতে দীর্ঘদিন রস ধরে রাখে। ব্রোকলি তে পর্চুর আগাছা হয় যা অপসারণ করতে অনেক লেবার খরচ হয় মালচিং পেপার দিয়ে চাষ করলে এই সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। মালচিং পেপার সম্পর্কে জানতে এই লিংকে ক্লিক করুন:https://krishimela.com.bd/shop/mulch-film-silver-black-irish-polymer-1-roll-400-meters/
ব্রোকলি চাষে পোকামাকড়
আমাদের দেশে ব্রোকলির সবচেয় ক্ষতিকর পোকা হল মাথাখেকো লেদা পোকা। এছাড়াও আরও অন্যান্য পোকার মধ্যে রয়েছে ক্রসোডলমিয়া লেদা পোকা, বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা ইত্যাদি। এছাড়াও ব্রোকলির বিভিন্ন ধরণের রোগের মধ্যে আছে পাতায় দাগ ও কালো পচা রোগ প্রধান সমস্যা। এছাড়া চারা ধ্বসা, গদাই মূল, মোজাইক, ইত্যাদি রোগ দ্বারা আক্রমণ হয়ে থাকে।
আধুনিক ব্রোকলি চাষে পরবর্তী পরিচর্যা
১. রোপণের পর প্রথম এক সপ্তাহ একদিন পরপরই হালকা সেচ দিতে হবে;
২. পরবর্তীতে ৮-১০ দিন পরপরই সেচ দিতে হবে;
৩. সেচ দেয়ার পর জমিতে ‘জো’ আসলে ব্রোকলি স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। গাছ আগাছামুক্ত হবে সেইসাথে পর্যাপ্ত আলোবাতাস পাবে। গাছ তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি পাবে এবং ফলনও বৃদ্ধি পাবে;
৪. সারের উপরিপ্রয়োগের যথা সময়ে করতে সারের উপরিপ্রয়োগের পরপরই সেচ দিতে হবে;
৫. পানি সেচ ও নিষ্কাশনের জন্য নালা সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে, সেচের অতিরিক্ত পানি বা বৃষ্টির পানি জমি থেকে বের করে দিতে হবে।
ফসল সংগ্রহ:
ব্রোকলি রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে পুষ্পমঞ্জুরি সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। ধারালো ছুরি বা ব্লেড দ্বারা তিন ইঞ্চি কা-সহ পুষ্প মঞ্জুরি কেটে সংগ্রহ করতে হয়। এভাবে একই জমি থেকে ১ মাসব্যাপী কয়েকবার ব্রোকলি সংগ্রহ করা যায়। পুষ্প মঞ্জুরি মোটামুটি জমাট বাঁধা অবস্থায় সংগ্রহ করা উচিত।
ফলন:
সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ১২-১৩ টন পাওয়া যায়।